[ad_1]
ইরানের উত্তরাঞ্চলে গতকাল শুক্রবার মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের এই সময়ে ভূকম্পন ইরানের গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
আলবোর্জ পর্বতমালায় আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। এটিকে ঘিরে পারমাণবিক বোমার গোপন পরীক্ষায় জল্পনা শুরু হয়েছে, যেখানে ইরান এখন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোন ধাপে রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সাংঘর্ষিক প্রতিবেদন আসছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঘিরে পারমাণবিক বোমার গোপন পরীক্ষায় জল্পনা খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি প্রাকৃতিক উৎপত্তির স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে। এ ছাড়া পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প অগভীর হয় এবং কদাচিৎ ৩ মাত্রার বেশি হয়। ইরানেরটি ছিল ৫ মাত্রার বেশি। এই মাত্রার ভূকম্পন তৈরির জন্য কয়েক মিলিয়ন টন টিএনটির (বিস্ফোরণের শক্তির একক) সমতুল্য শক্তি প্রয়োজন।
এবার আগের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার দৃষ্টান্তগুলো মিলিয়ে দেখা যাক:
২০১৬ সালের শুরুতেই দুটি উল্লেখযোগ্য ভূকম্পনের ঘটনা ঘটে, যার দ্বিতীয়টি আসলে কোনো প্রাকৃতিক ভূমিকম্প ছিল না। প্রথম ঘটনাটি ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি টেকটোনিক ভূমিকম্প, যা ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব কোণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে এবং কয়েকশ মানুষ নিহত বা আহত হয়।
এর পরের ঘটনাটি ঘটেছিল এর কয়েক দিন পর, যার মাত্রা অনেক কম ছিল। এতে সরাসরি কোনো ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। ২০০৬ সালে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা কর্মসূচি শুরু করার পর চতুর্থ পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ছিল এটি।
এই ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্প তরঙ্গ সারা বিশ্বের সিসমোমিটারগুলোতে ধরা পড়ে। বিশ্বের প্রধান সব দেশের রাজনীতিবিদরা, এমনকি উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনের নেতারাও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের প্রচারযন্ত্র উল্লাস প্রকাশ করে জানায়, এই সর্বশেষ অস্ত্র পরীক্ষায় তারা সফলভাবে তাদের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
ওই সময় উত্তর কোরিয়াই বিশ্বের একমাত্র দেশ ছিল, যেটি তখনই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিল। দেশটির পুংগেয়-রি পরীক্ষা কেন্দ্রটি উত্তর হামগিয়ং প্রদেশে অবস্থিত। এটি রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে প্রায় ২৩৫ মাইল উত্তর-পূর্বে এবং রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর ভ্লাদিভোস্তক থেকে প্রায় একই দূরত্বে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে সেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করে, যার পরবর্তীতে ২০০৯ এবং প্রায় তিন বছর আগে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আরও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এই পরীক্ষাগুলোর মাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে। বিস্ফোরণের ভূমিকম্প তরঙ্গ থেকে গণনা করা সমতুল্য ভূমিকম্পের মাত্রা থেকে এটি বোঝা যায়। এই মানগুলো ২০০৬ সালে ৪ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে ২০০৯ সালে ৪ দশমিক ৭ এবং ২০১৩ সালে ৫ দশমিক ১-এ উন্নীত হয়।
কলোরাডোর গোল্ডেন-এ অবস্থিত ইউএসজিএস ন্যাশনাল আর্থকোয়েক ইনফরমেশন সেন্টার (এনইআইসি)-এর বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার ঘটনাটির মাত্রাও ছিল ৫ দশমিক ১। জার্মানির পটসডামে অবস্থিত জিওফোরসুংজেনট্রাম কিছুটা বেশি—৫ দশমিক ২ মাত্রা অনুমান করেছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাঁচটি পারমাণবিক শক্তি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউএসএসআর—সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চীন) পরিচালিত ২ হাজার ১০০ টিরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে, এই মাত্রার মানগুলোকে বিস্ফোরণের শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, যাকে ‘বিস্ফোরণ ইয়েল্ড’ বলা হয়। সাধারণত, একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ যা ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প তরঙ্গ উৎপন্ন করে, তা প্রায় ৭ হাজার টন প্রচলিত রাসায়নিক বিস্ফোরক টিএনটি-এর বিস্ফোরণের সমতুল্য শক্তি উৎপন্ন করে। তুলনামূলকভাবে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে হিরোশিমাকে ধ্বংস করা পারমাণবিক বোমাটি এই বিস্ফোরণের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শক্তিশালী ছিল।
ভূমিকম্প সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ অস্ত্র পরীক্ষার ইয়েল্ড যুক্তিসংগত নির্ভুলতার সঙ্গে নির্ধারণ করা সম্ভব হলেও, ভূমিকম্পবিদেরা কোন ধরনের অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা বলতে পারেন না। ফলে, উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবিটি সত্য কিনা, তা ওই সময় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র: বার্কলি সিসমোলজি ল্যাব
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]