[ad_1]
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ঢাকা ব্লকেডের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলেন, যৌক্তিক দাবিগুলো মানা না হলে আগামীকাল রোববার (২২ জুন) ঢাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।
এর আগে আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাটারার নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাত শিক্ষার্থী আহত হন। বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করছে। যাদের বহিস্কার করা হয়েছিল, তাদের শাস্তি পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে, বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের অবস্থানে দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়, চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ উদ্যোগ নিলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে ৭ শিক্ষার্থী আহত:
গতকাল শুক্রবার থেকে ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে আন্দোলনের প্রচারণা চালায়। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী খোলা হলে, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর সকাল ৯টার দিকে তারা নতুন বাজার সড়ক অবরোধ করে। তারা বহিস্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিস্কারাদেশ তুলে নেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনে ইউআইউ শিক্ষার্থী ছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একত্মতা জানিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। আন্দোলনের কারণে কুড়িল ও বাড্ডা সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। কয়েক দফা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করে। তাদের ঠেলে ও ধাক্কা দিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে পরার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। কয়েকজনকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করা হলে এ সময় ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে পড়েন তারা। পুলিশ পুনরায় লাঠিচার্জ করলে, শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়।
পুলিশের লাঠি চার্জে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন আহত হয়। আহতরা হলেন—ইউআইইউর শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ, তাকি আহমেদ ও সালমান, ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটির অপি হাসান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির হাবিবুল্লাহ মাছরুন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জান্নাতুন নাহার ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির মেহেদী হাসান।
পুলিশের লাঠিচার্জের পর শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে সড়কে শুয়ে পড়েন তিন শিক্ষার্থী। এরপর সেখানে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। বেলা ৩টার দিকে সেখানে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থায়ী সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জাকারিয়া।
ভাটারা থানার সামনের সড়কে দাড়িয়ে তিনি বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর যে পুলিশ নগ্ন হামলা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগের দালাল পুলিশের বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়বেন না।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে রোববার থেকে পুরো ঢাকাজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।
আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি:
অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ইউআইইউ-তে চলমান অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার সংস্কারের বাস্তবায়ন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক আবু সাদাত মো. মোস্তাসির বিল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। গুটি কয়েক শিক্ষার্থী অসৎ উদ্দেশ্যে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইউআইইউ এর নয়। তিনি আরও বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এর আগে ২৬ এপ্রিল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ইউআইইউ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগ, মিডটার্মের সময় আবার পৌনে দুই ঘণ্টা করা ও ক্রেডিট প্রতি ইম্প্রুভমেন্ট ফি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন উপাচার্য আবুল কাসেম মিয়া ও ১১ বিভাগীয় প্রধান পদত্যাগ করেন। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করে আসছেন। এর মধ্যে ২ জুন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস জানায়, গত ৩ জুন চিঠি প্রাপ্তির পর বহিষ্কার হওয়া ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জনই শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে ১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রথম দফায় ৫ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকসহ ডাকা হয়েছে এবং তাদের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে।
প্রথম দফায় শাস্তি প্রত্যাহার হওয়ার শিক্ষার্থীরা হলেন—মেহেদী হাসান মামুন, হাসান মাহমুদ, আনিক আনজুম মনা, ফায়াজ কবির ও সাদিয়া রহমান। বহিষ্কৃত হওয়া বাকি শিক্ষার্থীদেরকে ২১ ও ২২ জুন অভিভাবকসহ ডাকা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]