[ad_1]
আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদী হলো পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য সম্পদ আহরণ, যোগাযোগব্যবস্থা ও সেচের অন্যতম মাধ্যম। সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশে নদীর ভূমিকা অনেক। কিন্তু দিন দিন বিভিন্ন কারণে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলে যখন নদীকে দূষিত করা হয়, তখন বোঝা যায় আমরা জাতি হিসেবে কতটুকু নদীবান্ধব! বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বিষখালী নদীর তীরে। এতে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে নদীর পানি এবং ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজননক্ষেত্র। পৌরসভার গাফিলতি এর অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভার স্বীকৃতি পেয়েও গত তিন যুগে তারা বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করেনি। এর দায় পৌর কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।
দেশের বিভিন্ন শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়ে নদীতে বর্জ্য ফেলে। নদী বিপন্ন হওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন সরকারের সময়ে নদ-নদী রক্ষার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। তবে সেসব শুধু কাগজবন্দীই থেকে গেছে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপের বাস্তবায়ন সেভাবে দেখা যায়নি। নদী বাঁচাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এর পরের বছর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠন করা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি)। মূলত দেশের নদ-নদীর দখল-দূষণ রোধের পাশাপাশি স্বাভাবিক নাব্যতা বজায় রাখার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটির থাকলেও তারা সেই অর্পিত দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে অধিকাংশ নদ-নদী দখল-দূষণে আজ মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে কতগুলো পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে, আর কতগুলো নদ-নদী যে বিলীন হয়ে গেছে, তার কোনো হিসাব নেই।
দুঃখজনকভাবে সত্য যে, এ দেশের অসংখ্য নদীর অবস্থা বিষখালীর মতোই। দখল-দূষণের কারণে অনেক নদী যেমন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে, তেমনি বর্জ্যের কবলে পড়ে অনেক নদী তার জৌলুশ হারিয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একটু উদ্যোগী হলে নদ-নদী এভাবে বিলীনের পথে অগ্রসর হতো না।
তবে আশার কথা—বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি নদী
দখল-দূষণমুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। সেটা কার্যকর করা গেলে নদীমাতৃক দেশের সম্মান ফেরানো সম্ভব হতে পারে।
নদীকে বলা হয় একটি দেশের জীবন্ত সত্তা। নদীর কারণে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে মানুষের কিছু ক্ষতি হলেও এদের উপকারের পরিমাণই অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রয়োজনে নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশও আছে। কিন্তু প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অবহেলা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
আমরা আশা করব, পাথরঘাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করবে। শুধু শোধনাগার নির্মাণ করলেই হবে না, পাশাপাশি নদীতীরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে পৌরবাসীকে সচেতন করার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]