ভুটানসহ আরও ৩৬ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে


প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে চার মাসের মাথায় আফগানিস্তান, মিয়ানমার, ইরান, লিবিয়াসহ ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাঁর প্রশাসন আরও ৩৬টি দেশকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখার চিন্তাভাবনা করছে। তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানও।
এ-সংক্রান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি লিখিত বার্তা পর্যালোচনা করেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন শর্ত ও মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হলে দেশটির মিত্র মিসর, জিবুতিসহ ক্যারিবীয় অঞ্চল, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রের ৩৬টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভিসা বা অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
এ বিষয়ে মন্তব্য পেতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। তবে তাতে সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বার্তার বিষয়ে মন্তব্য করতে তাঁরা রাজি নন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর স্বাক্ষর করা ওই লিখিত বার্তা গতকাল শনিবার ওই ৩৬টি দেশের সঙ্গে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের কাছে পাঠানো হয়। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কিছু শর্ত ও মানদণ্ড দেশগুলোকে পূরণ করতে হবে আর এর জন্য সময় দুই মাস।
পাশাপাশি এসব শর্ত ও মানদণ্ড পূরণে দেশগুলোর প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বুধবার সকাল ৮টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত বার্তাটিতে আগের বেশ কয়েকটি মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের মতে ওই দেশগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়।
কিছু দেশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সেখানে ‘যোগ্য বা সহযোগিতাপূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকার নেই, যারা নির্ভরযোগ্য পরিচয়পত্র বা অন্যান্য নাগরিক নথি সরবরাহ করতে পারে’। আবার কিছু দেশে ‘সরকারি দুর্নীতি ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে’।
এ ছাড়া কিছু দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভিসার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও দেশে ফেরেননি—এমন কথাও উল্লেখ রয়েছে বার্তাটিতে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অন্যান্য কারণ সম্পর্কে বার্তাটিতে বলা হয়, বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেয় ওই ৩৬ দেশ। তাদের কয়েকজন নাগরিকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইহুদিবিদ্বেষী ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে’ জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
এই ৩৬টি দেশ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শর্ত ও মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কবে থেকে কার্যকর হবে, তা অবশ্য জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই দফায় যেসব দেশকে তাদের নজরদারি বা বিবেচনার মধ্যে রেখেছে সেগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, ভুটান, বুরকিনা ফাসো, কাবো ভার্দে, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, জিবুতি, ডোমিনিকা, ইথিওপিয়া, মিশর, গ্যাবন, গাম্বিয়া ও ঘানা।
এ ছাড়া রয়েছে আইভরি কোস্ট, কিরগিজস্তান, লাইবেরিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, সেনেগাল, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তানজানিয়া, টোঙ্গা, টুভালু, উগান্ডা, ভানুয়াতু, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
এর আগে ৪ জুন আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন।