[ad_1]
বহুল প্রত্যাশিত লন্ডন বৈঠক সমঝোতার সুর শোনালেও আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চ্যালেঞ্জও আছে। এই চ্যালেঞ্জের কারণ, ওই বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় থাকা শর্তগুলো। শর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে জুলাই সনদ, জরুরি সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন হলে সময় আছে প্রায় আট মাস। এই সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত সংস্কার ও বিচারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি। এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই কেবল রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে যৌথ ঘোষণায়। ফলে সবকিছু এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় থাকছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক এবং বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণাকে ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা বিষয়টি প্রকাশও করেছে।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বৈঠকের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এবং ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করে এপ্রিল নাগাদ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ইচ্ছা জানান ড. ইউনূস। অন্যদিকে, তারেক রহমান অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং প্রচারের ক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বজায় রাখার বিষয়ে তাঁর দলের পক্ষ থেকে সরকারকে সব রকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি একই সঙ্গে আগামী রমজানের আগে ভোট আয়োজনের অনুরোধ জানান। নির্বাচন আয়োজনের সময় পছন্দ করার ক্ষেত্রে তাঁর মা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও এই মত বলেও জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রমজানের আগে শর্ত সাপেক্ষে ভোট আয়োজনে তাঁর প্রাথমিক সম্মতি জানান।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রমজানের আগে ভোটের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবিলা করতে হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কীভাবে হবে, কোনো চ্যালেঞ্জ তাঁরা দেখছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।’
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আগামী নির্বাচন কোন আইনে বা কোন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় হবে, বর্তমান সরকারের অধীনে হবে কি না, এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত কি না, প্রশাসনিক বিন্যাস কেমন হচ্ছে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও দলের ব্যক্তি-সমর্থকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকারের কী হবে, তা-ও দেখার বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকারপ্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে চেয়েছেন। সে কারণে আগের অবস্থান থেকে অনেক ছাড় দিয়ে এখন তাঁদের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলতে হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে ভোটের সময়সীমা জানানোর পর তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার এখন কী করবে, এমন প্রশ্নে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল শনিবার বলেন, ‘অত্যন্ত স্পষ্ট বিবৃতি। আর অতিরিক্ত বক্তব্যের প্রয়োজন দেখছি না।’ শুধু বিএনপির সঙ্গে কথা বলে ভোটের সময়সীমা নির্ধারণের কারণে জামায়াত ও এনসিপির সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে কথা বলবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, যৌথ বিবৃতিতে সংস্কারের বিষয়ে একমত হওয়া এবং বাস্তবায়নের পাশাপাশি জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার অনুষ্ঠান কৌশলে নির্বাচনের প্রস্তুতির শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়ায় ভোট রমজানের আগে হবে, এমন নিশ্চয়তা এখন বলতে গেলে নেই। কাজকর্মের ধরন ও গতি এমন আশাবাদ জাগায় না যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হলেও হতে পারে।
অন্যদিকে, সরকারের যে তিনজন উপদেষ্টার বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিএনপি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভিযোগ করে আসছে, তাঁদের একজন ড. খলিলুর রহমানকে বৈঠকের বিষয়ে অতি তৎপর দেখে বিস্মিত হয়েছেন বিএনপির অনেকে। লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে আগের দিন বৃহস্পতিবার আরেকটি বৈঠক হয়। হোটেল ডরচেস্টারের বাইরের ওই বৈঠকে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সহযোগীরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে ‘করিডর’ বিতর্কের কারণে খলিলুর রহমানকে নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে এলেও লন্ডন বৈঠকের প্রস্তুতি ও প্রচারে তাঁর যুক্ত থাকা এই ধারণা দেয়, উপদেষ্টাদের বিষয়সহ অনেক বিষয়ে সম্ভবত বিএনপির অবস্থান কিছুটা শিথিল হয়েছে।
বিএনপির নেতারা অবশ্য বলছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার আদৌ নির্বাচন করতে চায় কি না, দলে আগে এ নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ থাকলেও লন্ডন বৈঠকের পর তা কিছুটা কেটেছে। আগামী ডিসেম্বরে ভোটের দাবি থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে এখন ফেব্রুয়ারিকে ধরেই নির্বাচনী পরিকল্পনা শুরু করবে দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বলেন, ‘সংস্কারেও কোনো বাধা নেই, বিচারেও কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ের ওপর নির্বাচন নির্ভর করে না। আমরা আশা করছি, এটাকে ধরে সরকার এমন কিছু করবে না, যা নির্বাচনকে বিলম্বিত করবে।’
ইউনূস-তারেকের বৈঠককে অনেকে ইতিবাচকভাবে নিলেও জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল এ বৈঠক থেকে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে গতকাল দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়। জামায়াতের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে বসে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি দেওয়া দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয়। এর মাধ্যমে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তাঁর নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে। এতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে নির্বাচনের মাস ও তারিখ যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা বিচার ও সংস্কার সেভাবে প্রাধান্য পায়নি। তিনি বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দেওয়া, মৌলিক সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন নির্বাচনের পূর্বশর্ত। জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের মাস আর তারিখ নিয়ে কথা বলা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়বদ্ধতা ভুলে যাওয়ার নামান্তর।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]