[ad_1]
সরকার মাঠপর্যায়ে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষকদের পারিবারিক পুষ্টিবাগান গড়ে তুলতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে। অথচ সেই পুষ্টিবাগানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদের বিরুদ্ধে। তিনি পুষ্টিবাগানগুলো তৈরি না করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচার করে আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, চলতি অর্থবছরে মাঠে চাষযোগ্য বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন হাইব্রিড জাতের বীজ ও সারের নগদ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, গত বছরের ভয়াবহ বন্যা-পরবর্তী কৃষকের প্রণোদনার ১২ হাজার কেজি সার ও হাইব্রিড জাতের ধানের কয়েক লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেছেন এই কর্মকর্তা। কৃষকের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি নিজের অফিসে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছেন এবং শীতল হাওয়ার জন্য এসি বিলাসে মেতে উঠেছেন।
সরেজমিনে কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদের অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক লাখ টাকা খরচ করে তিনি ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়েছেন। বসিয়েছেন ২ টন ওজনের একটি এসি। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই বিলাসিতার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, কৃষকের জন্য বরাদ্দের টাকা দিয়েই তিনি এই বিলাসিতা করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলতি অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় পারিবারিক পুষ্টিবাগানের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। এর মধ্যে নতুন ২৪১টি পুষ্টিবাগানের জন্য ৭ হাজার করে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এই কর্মকর্তা ২৪১টি পুষ্টিবাগানে ৫ হাজার ৭০০ করে বিভিন্ন ধরনের বীজ ও সার প্রদান করে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
একইভাবে, পুরোনো ৩৫০টি পুষ্টিবাগান সংস্কারের জন্য কৃষকপ্রতি ৫ হাজার করে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদ ৩৫০ জন কৃষককে ৫০০ করে দিয়ে ১৫ লাখ ৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এই টাকা আত্মসাৎ করতে তিনি ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৬ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের মধ্যে মাঠে চাষযোগ্য বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের শীতকালীন সবজির বীজ, সার ও নগদ অর্থসহায়তা বাবদ ১৫০০ কৃষকের জন্য ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ১৫০ টাকা বরাদ্দ দেয়। এতে কৃষকপ্রতি ৩ হাজার ২১০ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
ফলন ভালো করার জন্য কৃষকপ্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ করা হয়। পরিপত্রে ২৭ লাখ টাকার বীজ ক্রয়ের জন্য একটি ক্রয় কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও এই কর্মকর্তা কোনো কমিটি গঠন করেননি। বিএডিসি কর্তৃক প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ করা না হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে বিএডিসির ডিলারদের কাছ থেকে বীজ ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও তিনি উপজেলার ১৮টি বিএডিসি ডিলারের কাছ থেকে না নিয়ে খোলাবাজার থেকে নিম্নমানের বীজ কিনে ভুয়া বিল-ভাউচার করে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিজের পকেটে ঢোকান। ফলে গত শীতকালীন মৌসুমে প্রণোদনার সবজি আশানুরূপ ফলন দেয়নি।
এদিকে গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রোপা আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬ হাজার কৃষকের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এতে করে প্রতিজন কৃষককে ৫ কেজি করে ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ১৭ এবং বিনা ধান ১৭ জাতের ধানের বীজ কিনে বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সরকারি দামে প্রতি কেজি ধান নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। কিন্তু তিনি খোলাবাজার থেকে নিম্নমানের এসব বীজ ৪০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেন।
এ ছাড়া উপপরিচালকের কার্যালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খরিপ-২ মৌসুমে রোপা আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তিনি সেখানে ৫ কেজি করে সার দিয়ে বাকি সার আত্মসাৎ করেন, যার মূল্য ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, ‘আমাদের মাঝেমধ্যে কৃষি অফিস থেকে কিছু সার ও বীজ দেওয়া হয়। তবে প্রতিজনের বরাদ্দ কত তা আমরা জানি না।’ এক শীতকালীন সবজিচাষি বলেন, ‘এ বছর শীতকালের জন্য বিভিন্ন জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলনও ভালো হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘প্রতিটি ক্রয় এবং বরাদ্দ ইউএনওর অনুমতি নিয়ে করেছি। আমি কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম করিনি।’ নিজের অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও এসির জন্য কোনো বরাদ্দ এসেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে সংযোগবিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘আমি এই কার্যালয়ে যোগদান করেছি সাড়ে ৩ মাস হলো। যে বরাদ্দের কথা বলেছেন, তা আমি যোগদানের আগের। আমার জানামতে, কৃষি অফিসের কোনো বিলে এখনো স্বাক্ষর করিনি। আপনাদের মাধ্যমে অনিয়মের যে অভিযোগ পেয়েছি, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি লিখব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অনিয়মের কথা জানতে পারলাম। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে কৃষি কর্মকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]