প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১১:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১০:১৫ এ.এম

সৈয়দ তাজুল ইসলাম নয়ন।। ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও কৌশলে আবারও বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। খুচরা বাজারে প্রতিদিন কিছু না কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে এক ধরনের চাপ তৈরি করছে সিন্ডিকেট। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু, মসুর ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ ও সবজির দাম বেড়েছে। অথচ সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি দুর্ভোগে পড়ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ২৫ টাকা। মসুর ডাল এখন ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ১৩৫ টাকা। ডজনপ্রতি ফার্মের ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫-১৩৬ টাকায়, যা আগে ছিল ১২৮-১২৯ টাকা।
সয়াবিন তেলের দামেও রয়েছে অসঙ্গতি। বোতলজাত সয়াবিন এখন ১৭৫ টাকা লিটার, খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়—যা ঈদের আগে ছিল ১৬৮ টাকা।
নয়াবাজারে বাজার করতে আসা ভ্যানচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, "রোজার সময় কিছুটা স্বস্তি ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিনই কিছু না কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে। আমরা গরিব মানুষ, মাছ-মাংস তো দূরের কথা, ডাল-আলু-ডিমও এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অথচ বাজারে ঘাটতি নেই, তবু দাম বাড়ছে।"
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “পণ্যের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তদের সমস্যা না হলেও মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের অনেক কষ্ট হয়। তাই বাজারে রোজার সময়ের মতো নজরদারি অব্যাহত রাখা দরকার।”
এদিকে, চুপিসারে বাড়ানো হচ্ছে পেঁয়াজের দামও। এখন দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে, আর আমদানিকৃত রসুনের দাম সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা। আদার দাম মানভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪২০ টাকা কেজিতে। জিরার দাম ৬৫০-৭৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা এবং এলাচ ৫১০০ টাকা প্রতি কেজি।
সবজি বাজারেও দাম বেড়েছে। টমেটো এখন ৬০-৬৫ টাকা কেজি, পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজি—যা ঈদের আগে ছিল ৮০ টাকা। একটি লেবুর দাম এখন ৮-১০ টাকা।
মাছের বাজারেও একই চিত্র। কেজিপ্রতি ৫-৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। যেমন—পাঙাশ ২০০-২২০ টাকা (আগে ১৮০-১৯০), তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, সরপুঁটি ২২০-২৩৫ টাকা, চাষের কই ২৫০ টাকা, বড় রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি রুই ৩০০-৩২০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা। চিংড়ি মাছের দাম আরও চড়া—চাষের ৬৫০-৭৫০ টাকা, নদীর চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা। এছাড়া শিং মাছ ৮৫০-৯০০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০-৮০০ টাকা।
এই নীরব মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দায়ী করা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটকে। ক্যাবের দাবি, অব্যাহত নজরদারি না থাকলে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরবে না। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।