ক্রাইম জোন ২৪।। বরিশালে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই, আর রোদের প্রখরতা যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে লোডশেডিং আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এরই মাঝে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
গত ৫ এপ্রিল বরিশালে তাপমাত্রা পৌঁছায় ৩৬ ডিগ্রির ঘরে। যদিও ৯ এপ্রিল বুধবার কিছুটা কমে তা দাঁড়ায় ৩৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, তবে গরমের তীব্রতায় তেমন একটা স্বস্তি মেলেনি। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় ঘাম আর অস্বস্তির কারণে শ্রমজীবী মানুষজনের কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
শুধু গরম নয়, বরিশাল জুড়ে বারবার লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ সংকটও এক ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই একই চিত্র। আর এই অসহনীয় পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে মানুষের স্বাস্থ্যে। বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৩৩৪ জন। এর মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৩ জন, আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২২ জন।
হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ মাত্র ৪টি নির্ধারিত বেডের স্থলে বাড়িয়ে ১২টি বেড করলেও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই চিত্র। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—সব বয়সের মানুষ ডায়রিয়া নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই জানান, হঠাৎ করে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে বমি, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। প্রথমে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিলেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র নার্স শিল্পী রানী নাথ বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আমাদের স্যালাইন ও ওষুধের পর্যাপ্ত মজুদ আছে, তবে সমস্যা হচ্ছে বেড সংকটে।”
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে এ রোগ হতে পারে। পানিবাহিত হওয়ায় সবাইকে ফুটানো ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে সামনের দিনগুলোতে।”
অন্যদিকে রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, মশা-মাছির উপদ্রব ও নোংরা পরিবেশে হাসপাতালে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলেন, হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানে অস্থায়ীভাবে বিছানা পেতে চিকিৎসা চলছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ বছর ডায়রিয়ায় কোনো মৃত্যুর খবর নেই। তবে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়লে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]