ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের অঞ্চল-১০-এর সাতারকুল অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। এই লাইসেন্সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে "ট্রাম্প অ্যাসোসিয়েশন" এবং ব্যবসার ধরন হিসেবে উল্লেখ রয়েছে "কাঁকড়া, মাছ বিক্রেতা"।
তবে, লাইসেন্সে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের। কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেখানো হয়েছে ঢাকার বাড্ডা, আফতাবনগরের ২ নম্বর সেক্টরের এফ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৪০/৪২ নম্বর বাড়ি।
লাইসেন্সে মালিকের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাবার নাম ফ্রেড ট্রাম্প, মায়ের নাম ম্যারি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প, এমনকি মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ছবিও সংযুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখন আবেদনকারী অনলাইনে তথ্য দিয়ে আবেদন করলে এবং ফি পরিশোধ করলেই তাৎক্ষণিকভাবে ই-ট্রেড লাইসেন্স জারি হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, "এই নতুন পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে অনেকেই ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স নিচ্ছে। ট্রাম্পের নামে লাইসেন্স ইস্যু হওয়াটাও এরই একটি প্রমাণ।"
ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, "স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুর পর আমাদের কর্মীরা পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাম্পের নামে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেন। এতে প্রমাণিত হয়, যাচাই-বাছাই ছাড়া কেউ ইচ্ছেমতো লাইসেন্স নিতে পারছে, যা সিস্টেমের একটি বড় ত্রুটি।"
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং ভবিষ্যতে এমন জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এখন থেকে বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বিশেষ করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরাসরি পরিদর্শন ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া হবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ঢাকায় কাঁকড়া ব্যবসার লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বিষয়টি হাস্যকর মনে করলেও, অনেকে প্রশাসনিক ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "ঢাকায় যদি ট্রাম্প কাঁকড়ার ব্যবসা করতে আসে, তাহলে আমাদের আর চিন্তা কী!"
অন্য একজন মন্তব্য করেন, "এত সহজে ভুয়া লাইসেন্স নেওয়া যায়! তাহলে কত মানুষ যে জাল লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে, তার কোনো হিসাব নেই।"
এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-গভর্নেন্স ও স্বয়ংক্রিয় সরকারি সেবার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন, তবে এ ধরনের ভুল রোধ করতে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী যাচাই-বাছাই পদ্ধতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।