গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে একটি নতুন ছাত্রসংগঠন। তবে এ সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহৃত হবে না। বরং এটি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতারা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ ছাত্রসংগঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দাবি করেন, তাদের পুরনো সংগঠনের সঙ্গে নতুন সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি হবে একটি স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদরাসায় প্রচারণা চালানো হবে। নতুন সংগঠনের মূল নীতি হবে 'স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট'।
নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে কারা থাকছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর নাম সামনে এসেছে। তারা হলেন:
ধারণা করা হচ্ছে, ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হলে আব্দুল কাদের আহ্বায়ক ও রাফিয়া রেহনুমা হৃদি সদস্যসচিব হতে পারেন।
প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করা হবে, এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ঘোষণা আসবে। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠন করা হবে। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন ছাত্রসংগঠনের প্রাথমিক কমিটিতে ১০০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে ৩০ জন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ঢাকার আশপাশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্ব পাবেন।
নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনে কিছু মূলনীতি ও মৌলিক প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে:
প্রথমে সংগঠনের জন্য 'গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি' নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে এ নামে আগে একটি সংগঠন থাকায় নতুন নাম চূড়ান্ত হয়নি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলছে এবং এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
সংগঠনের সম্ভাব্য সদস্যসচিব রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন,
"আমাদের নীতি ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দেশের স্বার্থে কাজ করবো। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ না হয়েও ছাত্ররাজনীতি করা সম্ভব—আমরা সেটাই দেখাতে চাই।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম আলী রেজা বলেন,
"এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে নতুন। সাধারণত বাংলাদেশে যে ধরনের ছাত্রসংগঠন দেখা যায়, তার চেয়ে এদের বক্তব্যে ভিন্নতা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, তারা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারে।"
নতুন এই ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]