বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দিন দিন আরও গুরুতর হচ্ছে। একদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অন্যদিকে গ্যাস ও জ্বালানির সংকট জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। গ্রামের মতো শহরেও লোডশেডিং বেড়েছে, কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহন খাতও।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরমের দিনে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। রমজান মাসেও ঘন ঘন লোডশেডিং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ তো বটেই, শহরের মানুষও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
শিল্প-কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কল-কারখানায় দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়, ফলে মেশিন চালানো সম্ভব হয় না। এতে মালিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কর্মীরাও সময়মতো কাজ শেষ করতে পারছে না। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে, যার ফলে বাজারেও কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
শুধু বিদ্যুৎ নয়, জ্বালানির সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে। ডিজেল, পেট্রল, সিএনজি, এমনকি রান্নার গ্যাসের সরবরাহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। গাড়ির চালকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন গ্যাসের জন্য। এতে পরিবহন খাতে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। গাড়ি কম থাকায় ভাড়া বেড়ে গেছে, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের নিজস্ব উৎপাদন কম থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ মূলত আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। জ্বালানি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে। জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কিছু নীতিগত পরিবর্তনের কথাও ভাবছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট কাটাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দিতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো গেলে সংকট কিছুটা কমতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
এই সংকট কতদিন চলবে, তা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সরকারের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। জনগণের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]