সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফটোসেশন ভারতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার বার্তাও এসেছে। কিন্তু এর এক সপ্তাহ পরেই বহুপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-এর ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে থাকছেন না মোদি। এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতে অংশগ্রহণ করবেন। এটি নেতাদের পর্যায়ের একটি বড় সম্মেলন।’
মোদি এই ভার্চুয়াল বৈঠকে অনুপস্থিত থাকবেন, এই বিষয়টি বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে যখন সি এবং পুতিনের পাশে মোদির দাঁড়ানো এবং হাস্যোজ্জ্বল ছবিগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, সেখানে হঠাৎ এমন একটি সম্মেলনে তাঁর অনুপস্থিতি কী বার্তা দিচ্ছে তা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর বাণিজ্য শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে এসসিও সম্মেলনে মোদির উপস্থিতি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কোনো সরকারি কারণ জানানো হয়নি। তবে সূত্র অনুযায়ী, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণের পরে এটি নয়াদিল্লির একটি কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা।
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার অর্ধেক তথাকথিত পারস্পরিক শুল্ক এবং বাকি অর্ধেক রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার জন্য জরিমানা। ভারত এই অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ককে ‘অযৌক্তিক’ অভিহিত করেছে এবং যুক্তি দিয়েছে, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ যখন মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতকে আলাদা করে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রিকস নেতাদের এই বৈঠক ডেকেছেন। ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের মতে, লুলা চান এই আলোচনা শুল্কের বাইরে গিয়ে বহুপক্ষীয় সম্পর্ককে সমর্থন করার জন্য জোটের প্রধান উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলুক। তবে তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, ব্রাজিল এই বৈঠককে স্পষ্টভাবে একটি মার্কিন-বিরোধী প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে চায় না।
এই বৈঠকের পেছনের প্রেক্ষাপট হলো ব্রাজিলের সঙ্গেও ওয়াশিংটনের সংঘাত। গত জুলাই মাসে ট্রাম্প ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান-সম্পর্কিত অভিযোগের বিচার বন্ধ না করে, তবে দেশটির ওপর উচ্চ শুল্কের হুমকি দেন। ব্রাজিল এখন ৫০ শতাংশ শুল্কের শিকার, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়োজাহাজ এবং কমলালেবুর জুসের মতো কিছু পণ্যে ছাড় দিয়েছে।
ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিলীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ব্রিকস সদস্যদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন শুল্কের কারণে এই জোটের জন্য একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁরা আরও বলেন, মোদির ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে ব্রিকসের মধ্যে একটি বাধা হিসেবে দেখা হয়েছে, কারণ গত জুলাইয়ে নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে শুল্কের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে এটি একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এসসিও শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক। গত সপ্তাহের শুরুতে তিনি ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, ‘ভারত তার বেশির ভাগ তেল এবং সামরিক পণ্য রাশিয়া থেকে কেনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব কম।’ ভারত-মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তি এটি।
শুক্রবার ট্রাম্প সমালোচনার ধার আরও বাড়িয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ভারত এবং রাশিয়াকে গভীর, অন্ধকার চীনের কাছে হারিয়েছে’। সেই সঙ্গে ব্যঙ্গাত্মকভাবে তাদের ‘একসঙ্গে একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ’ কামনা করেন তিনি।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুতনিক শুক্রবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বার্তাটিতে আবারও জোর দিয়ে কথা বলেন এবং সরাসরি ব্রিকস জোটকে লক্ষ্য করে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারত এখনো তাদের বাজার খুলতে চায় না, রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে চায় না এবং ব্রিকস-এর অংশ হওয়া বন্ধ করতে চায় না, তাই না? তারা রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে একটি স্বরবর্ণের মতো। যদি তোমরা এমনই হতে চাও, তাহলে হও।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় বারবার ব্রিকসকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। জুলাই মাসে তিনি সতর্ক করে বলেন, যে কোনো দেশ এই ব্লকের ‘মার্কিন-বিরোধী নীতির’ সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। গত মাসে তিনি এই জোটকে ‘একটি ছোট গ্রুপ’ বলে উড়িয়ে দেন। তাঁর মতে, এই জোট মার্কিন ডলারকে দুর্বল করতে চায়। তিনি বলেন, যদি জোটের সদস্যরা স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যায় তবে আরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভারত বরাবরই বলে আসছে, ডি-ডলারাইজেশন তাদের এজেন্ডার অংশ নয়। গত মাসে এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, ‘ডি-ডলারাইজেশন ভারতের আর্থিক এজেন্ডার অংশ নয়।’ যদিও ব্রিকস সদস্যরা স্থানীয় মুদ্রায় আন্তসীমান্ত বাণিজ্যের উপায় খুঁজছে।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]