শিরোনাম

ডায়রিয়া-পেটব্যথা ও বমি নিয়ে নাটোর হাসপাতালে ভর্তি ১৪৭ জন

ডায়রিয়া-পেটব্যথা ও বমি নিয়ে নাটোর হাসপাতালে ভর্তি ১৪৭ জন

নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৭ জন হঠাৎ পেটের অসুখে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৬৬ জন, মহিলা ৫৫ জন ও শিশু ২৬টি। এ ঘটনায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ডায়রিয়া, পেটব্যাথা ও বমি নিয়ে পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের প্রায় দেড় শ রোগী হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, পৌরসভার সরবরাহ লাইনের পানি পানের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। ঘটনা তদন্তে আইসিডিডিআরবির একটি প্রতিনিধিদলও কাজ করবে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির প্রায় ৩০ জন বাসিন্দার কেউ কেউ হঠাৎ ডায়রিয়া, পেটেব্যথা ও বমি ভাব অনুভব করে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা স্যালাইন, পেটব্যথা কমানোর সহজপ্রাপ্য ওষুধসহ বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ সেবন করে। কিন্ত তাতে কাজ না হওয়ায় মধ্যরাত থেকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করে। এরপর সকাল থেকে একই ওয়ার্ডের কাঁঠালবাড়ি, ঘোড়াগাছা ও ডোমপাড়া এলাকার শতাধিক মানুষ একই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, গতকাল বিকেলের পর পৌরসভার সরবরাহ পানি পানের পর তারা হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করে। তারপর থেকে ডায়রিয়া, শরীরের রগ ও পেশিতে টানসহ বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করতে থাকে।

আমেনা খাতুন নামের এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি বাবা ও ভাইকে হাসপাতালে এনেছেন। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে দুজনই পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করছিলেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করা অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে।

রবিউল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, ‘বিকেল থেকে শরীর দুর্বল লাগছিল। সন্ধ্যায় পানি পানের পর পেটব্যথা ও ডায়রিয়া শুরু হয়। রাতে সাত থেকে আটবার ল্যাট্রিনে (শৌচাগার) গিয়েছি। অবস্থা ভালো না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’

সোহাগ শিকদার নামের ঝাউতলা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা থেকে পানি পানের পর আমার পেটব্যথা, ডায়রিয়া ও শরীরের বিভিন্ন রগ ও পেশিতে টান ধরতেছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

পৌরসভার ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা মণি বেগম বলেন, ‘বেশ কিছুদিন হলো পৌরসভার পানি আসে ঘোলা ও ময়লাযুক্ত। আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে এ পানি খেতে হয়।’

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আর এম ও) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘পানিবাহিত কারণই শুধু নয়, গত তিন দিনের টানা গরমে ডিহাইড্রেশনের কারণেও এমন বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সুস্থ করতে।’

জেলা সিভিল সার্জন মুক্তাদির আরেফিন বলন, ‘ঠিক কী কারণে এতগুলো মানুষ একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো, তা আমরা এখনো নিশ্চিত না। তবে সবারই পানিবাহিত রোগের উপসর্গ আছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিশ্চিতে আমরা আইসিডিডিআরবির সহায়তা চেয়েছি। তাদের একটি দল নাটোরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা পানি পরীক্ষা করে কারণ জানাবে। এ ছাড়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করব। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুত আছে। কোনো সংকট হবে না। সবাইকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি।’

নাটোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হক বলেন, ‘পৌরসভার সরবরাহ করা পানি একই ধরনের কয়েকটি ট্যাংক থেকে ৯টি ওয়ার্ডের সব এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে ঘটনা ঘটেছে মাত্র একটি ওয়ার্ডের কিছু এলাকায়। ওই এলাকার সরবরাহ লাইনে কোনো ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আমরা বলেছি। তাদের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।’

আজ বুধবার দুপুরে নাটোর সদর আধুনিক হাসপাতালে রোগীদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক (ডিসি) আসমা শাহীন। এ সময় তিনি ভর্তি রোগীদের খোঁজখবর নেন এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পানি থেকে সবার পেটের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছি। ইতিমধ্যে পানির নমুনা বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত উপকরণ মজুত আছে। রোগীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button