নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন হত্যার তিন বছর আজ। ঘটনার ২ বছর পর ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর সাবেক এসপি, ডিসিসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান। তবে মামলায় গুলি ছোড়া আলোচিত এসআই কনক এবং সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ছেলে হত্যার পর থেকে শাওনের মা ফরিদা বেগম পাগলপ্রায়। শাওনের বিষয়ে প্রশ্ন করলেই নীরব হয়ে যান। শুধু মাঝেমধ্যে বলে ওঠেন, ‘আমার পোলারে যারা মারছে, আল্লায় ওগো বিচার করব। আমি ওগো বিচার চাই।’
২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের। এই ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়। সংঘর্ষের মাঝে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবদল কর্মী শাওন। বিএনপির তরফ থেকে দাবি করা হয়, ডিবি পুলিশের ছোড়া গুলিতেই নিহত হয়েছে শাওন। তবে ঘটনার মোড় ঘুরাতে শাওনকে যুবলীগ কর্মী বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলও গণমাধ্যমের সামনে তাঁকে যুবলীগ কর্মী বলে পরিচয় দেন। মূলত শাওন ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।
তবে সে সময় প্রকাশিত মিছিল ও সংঘর্ষের ছবিতে দেখা যায় শাওনকে জেলা যুবদলের বর্তমান আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকের সঙ্গে মিছিল করতে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে। ঘটনার পরপরই বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় বাদী দেখানো হয় শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধানকে।
কিন্তু ওই মামলা তিনি করেননি বলে জানান মিলন প্রধান। তিনি বলেন, ‘সেদিন বেলা দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমাকে পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। আমার তখন চিন্তা ছিল যে ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমাকে সাদা কাগজে সই করতে বলেছে, তাই করে দিয়েছি। শাওন যুবদল করত, এটা স্পষ্ট। ওর মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের অফার দিয়েছে আমরা যেন তাদের পক্ষ নিই। পুরো ফ্যামিলি বিদেশ পাঠায়া দিবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দিবে, কেউ বাধা দিবে না। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু আমরা ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না বলে জানিয়েছি।’
এদিকে ৫ আগস্টের পর পুরোনো মামলা বাতিল করে নতুন করে মামলা দায়ের করেন মিলন প্রধান। মামলায় আসামি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, সাবেক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ, সদর থানার সাবেক ওসি আনিচুর রহমান, ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনকসহ ৫২ জনকে। তবে এই মামলায় এখন পর্যন্ত আলোচিত আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও এসআই কনককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘শাওন হত্যা আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জন্য দুঃখজনক একটি দিন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো আনন্দের দিনটি বিষাদময় করে দিয়ে গেছে হাসিনা সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। শাওনের পরিবারের পাশে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘এই মামলাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এই পর্যন্ত মামলার আসামি এসআই কনক ও গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অধিকাংশ আসামি আত্মগোপনে ও কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের তদন্তকাজ চলমান আছে। তদন্ত সাপেক্ষে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]