ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ট্রাম্প এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার দৃশ্যত এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে পাত্তা দিচ্ছে না। তবে শুল্কের চাপে দেশটির ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ভারতে প্রস্তুত একটি শার্ট এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হতো ১০ ডলারে। ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের জেরে সেই পোশাকের দাম বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৪ ডলারে। সে তুলনায় চীনের পোশাকের দাম পড়বে ১৪ দশমিক ২ ডলার, বাংলাদেশের পোশাকের দাম ১৩ দশমিক ২ ডলার আর ভিয়েতনামের পোশাকের দাম পড়বে ১২ ডলার। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের ওপর শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশও করে, তারপরও দেশটি এশিয়ার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারতের তৈরি পোশাক খাতের বড় কেন্দ্রগুলোর একটি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুর। এখানকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এন কৃষ্ণমূর্তির কারখানায় প্রায় ২০০টি সেলাই মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে গুটিকয়েকই এখন সক্রিয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের তরফ থেকে চলতি মৌসুমের শেষ অর্ডার সরবরাহের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। কারখানার এক কোনায় পড়ে রয়েছে নতুন কিছু নমুনা ডিজাইনের কাপড়। সেগুলোয় এখন ধুলো জমছে। কারণ, ট্রাম্পের শুল্কে নতুন এসব ডিজাইনের উৎপাদন এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শুধু এন কৃষ্ণমূর্তির কারখানাই নয়, তিরুপ্পুরের বেশির ভাগ কারখানায়ই এখন একই দৃশ্য। অথচ তৈরি পোশাক খাত থেকে ভারতের যত রপ্তানি আয়, তার এক-তৃতীয়াংশ আসে এই তিরুপ্পুর থেকেই। তৈরি পোশাক খাত থেকে ভারতের রপ্তানি আয় ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা)। টার্গেট, ওয়ালমার্ট, গ্যাপ এবং জারার মতো মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো ভারতের ক্রেতা।
এন কৃষ্ণমূর্তি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ হয়তো আমাদের আর কোনো কাজই থাকবে না।’ তিনি জানান, ক্রেতারা এরই মধ্যে অর্ডার স্থগিত করতে শুরু করেছেন। এর প্রভাবে তাঁকেও কর্মী কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। অথচ শুল্ক আরোপের ঠিক আগে তিনি উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ২৫০ জন নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছিলেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণাটা খুব নাজুক সময়ে এসেছে। কারণ, ভারতের তৈরি পোশাক খাতের বার্ষিক বিক্রির প্রায় অর্ধেকই আসে বড়দিনের আগে। শুল্কের চাপে এখন রপ্তানির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ব্যবসায়ীদের স্থানীয় বাজারের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। টিকে থাকতে দীপাবলি উৎসব সামনে রেখে কাজ করতে হচ্ছে।
তিরুপ্পুরের রাফট গার্মেন্টস আন্ডারওয়্যার তৈরি করে। সেই কারখানায় প্রায় ১০ লাখ ডলার মূল্যের কাপড়ে এখন ধুলো পড়ছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির কথা ছিল। কারখানার মালিক শিবা সুব্রামানিয়াম বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করবে। গত মাস থেকেই উৎপাদন পুরোপুরি থেমে আছে। এভাবে চললে শ্রমিকদের বেতন দেব কীভাবে?’
অবশ্য মার্কিন শুল্কের প্রভাব কাটাতে ভারতের সরকার কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার অন্যতম। বিশ্বজুড়ে বাজার ছড়াতে অন্যান্য সম্ভাব্য ক্রেতাদেশের সঙ্গেও চলছে আলোচনা। তবে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, এসবে কিছুই হবে না।
গ্লোবাল ট্রেড রিচার্স ইনিশিয়েটিভের অর্জ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আমরা হয়তো দেখব, মার্কিন ক্রেতারা ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে মেক্সিকো, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।’
শুধু তৈরি পোশাকই নয়, ভারতের অলংকারশিল্পেও বড় ধাক্কা লেগেছে। এই শিল্প থেকে ভারতের রপ্তানি বার্ষিক আয় ১০ বিলিয়ন ডলার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেই তাঁরা ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের অলংকার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেন। এ বছর ঠিক সে সময় শুল্ক কার্যকর হয়েছে। কাজেই এবার ব্যবসা কেমন হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।
ক্রিয়েশন জুয়েলারির আদিল কোতোয়াল বলেন, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অংশীদারত্ব হয়তো নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ব্যবসা, তা বছরের পর বছর চলে এসেছে। ওই দুই দেশে কয়েক মাসেই এমন ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ হীরার অলংকার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। তিনি বলেন, ‘এই শুল্ক হজম করা কঠিন। এমনকি মার্কিন ক্রেতারাও এমন শুল্কের চাপ নিতে পারবে না।’
ধাক্কা লেগেছে ভারতের চিংড়ি রপ্তানিতেও। অনেক চিংড়িচাষিই মার্কিন বাজার হারানোর শঙ্কায় ব্যবসা পরিবর্তনের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। ভারত হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি এবং তাদের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]