আগামীকাল বুধবার (২৭ আগস্ট) রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ইতিহাসের অন্যতম কঠিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতিমধ্যে কার্যকর রয়েছে। আগামীকাল থেকে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক, যা ভারত কর্তৃক রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জরিমানা হিসেবে আরোপ করা হয়েছে।
রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব
যদিও ৩০ শতাংশ রপ্তানি শুল্কমুক্ত থাকবে ও ৪ শতাংশ রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে, তবে ৬৬ শতাংশের (৬০.২ বিলিয়ন ডলার) বিশাল অংশের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে, যা ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতগুলোকে আঘাত করবে। এর মধ্যে মার্কিন শুল্কের এ ধাক্কায় আজ মঙ্গলবার ভারতীয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন ঘটেছে এবং বিনিয়োগকারীদের সম্পদও অনেকটা কমেছে।
তবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস ও মরগান স্ট্যানলির মতো গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের প্রবৃদ্ধির ওপর এ শুল্কের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, ভারতের অর্থনীতি মূলত অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ভোগের ওপর নির্ভরশীল।
ঝুঁকিতে শ্রমঘন খাত ও ছোট ব্যবসা
বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, কার্পেট, চিংড়ি এবং আসবাবপত্রের মতো শ্রমঘন খাতগুলো এ কঠোর শুল্কের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের একটি পোশাক কারখানার মালিক ভদ্রেশ দধিয়া রপ্তানিকারকদের ওপর এই অস্থিতিশীল চাপ নিয়ে বলেন, সত্যি বলতে, কোনো আমদানিকারকের জন্য এত বড় ধাক্কা হজম করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে, যখন বস্ত্র খাতের মতো অত্যন্ত কম লাভে পরিচালিত শিল্পে এটি ঘটে। এ বিশাল শুল্ক বৃদ্ধির অতিরিক্ত খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে।
রপ্তানি খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে। বিশেষ করে, তিরুপুরের তৈরি পোশাকশিল্প ও সুরাটের হীরা কাটার শ্রমিকেরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
ভারতের কঠিন পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার (আইসিএআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট বেদ জৈন বলেন, ভারত একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। এখন আমরা যদি রাশিয়ার তেল না কিনি, তবে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং, আমাদের দুটি খারাপ বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে। হয় আমরা রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করব ও অর্থনৈতিকভাবে অদক্ষ হয়ে পড়ব অথবা আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক থাকা চালিয়ে যাব এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলা করব।’
তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এর ক্ষতি কেবল ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় খোদ মার্কিন অর্থনীতিও উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ও ধীর প্রবৃদ্ধির মুখে পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদ এসপি শর্মা মার্কিন অর্থনীতির ঝুঁকির ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এটি কোনোভাবেই মার্কিন অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে, কারণ, এটি তাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতির গতিপথকে আরও বাড়িয়ে দেবে।’
প্রতিযোগীদের জন্য সুযোগ ও নতুন মেরুকরণ
এ শুল্ক আরোপের ফলে চীন, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও তুরস্কের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো মার্কিন বাজারে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের অংশীদার, তাই ওয়াশিংটনের এ শুল্কের প্রভাব নির্দিষ্ট শিল্পগুলোর জন্য গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করবে।
এদিকে ভারত সরকার ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাতগুলোকে সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবছে। একই সঙ্গে তারা বিকল্প বাজার হিসেবে চীন, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর দিতে উৎসাহিত করছে।
সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]