পাকিস্তানের জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা ও ইউটিউবার ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আলি মির্জাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলম শহরের এই আলেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি ভিডিও বক্তব্যে নবী মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সামা টিভি সহ একাধিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৩১ লাখেরও বেশি ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার থাকা ইঞ্জিনিয়ার মির্জাকে জনশৃঙ্খলা রক্ষা অধ্যাদেশের আওতায় ৩০ দিনের জন্য আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পাকিস্তানি দৈনিক ডন জানায়, এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ কাউকে আটক রাখতে পারে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ সহ অনেকের মতে, এই আইন অস্পষ্ট এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর হাতে এটি প্রায়ই দমননীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আলি মির্জা জেলম শহরের মেশিন মহল্লার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইউটিউবে ধর্ম ও সমাজ নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে আসছেন। খোলামেলা ভাষার জন্য যেমন তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন, তেমনি বারবার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। তাঁকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে।
সর্বশেষ ঘটনা সম্পর্কে জানা গেছে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন—একটি বিশেষ সম্প্রদায় নবীকে ভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকে। কথা প্রসঙ্গে ওই নামটি মির্জা উচ্চারণ করায় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এটিকেই অবমাননা হিসেবে ধরে নেয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে।
আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মির্জার গ্রেপ্তার মূলত স্বাধীন কণ্ঠস্বর দমনের অংশ। লাহোরের আইনজীবী জে সাজ্জাল শাহিদি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এটি জনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নয়, বরং সেসব কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার প্রয়াস, যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত আলেমদের আধিপত্যকে প্রশ্ন করার সাহস রাখে। অথচ সহিংস সংগঠনগুলো বারবার ছাড় পায়।’
ইঞ্জিনিয়ার মির্জার বিতর্কিত ইতিহাসও দীর্ঘ। ২০২০ সালে তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০২১ সালে জেলমের এক ধর্মীয় একাডেমিতে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। একই বছরে তিনি দেওবন্দি আলেম তারিক মাসুদের সঙ্গে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বিষয়ে তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আবার ২০২৩ সালে বেরেলভি আলেম হানিফ কোরেশির সঙ্গে নির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েন।
এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ম অবমাননার মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের মহররম মাসে সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে প্রশাসন মির্জাসহ আরও ১৭ জন আলেমের বক্তৃতা নিষিদ্ধ করেছিল।
একদিকে বিশাল অনলাইন অনুসারী, অন্যদিকে বিতর্কিত বক্তব্য—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে ইঞ্জিনিয়ার আলি মির্জা এখন পাকিস্তানের ধর্মীয় অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত আলেমদের একজন হয়ে উঠেছেন।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]