গাজায় জিম্মি ৫০ বন্দীকে মুক্ত করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন ইসরায়েলের হাজার হাজার মানুষ। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবারের ফোরাম এ কর্মসূচির আয়োজন করে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এ বিক্ষোভের আয়োজন করে সংগঠনটি।
বিক্ষোভের সূচনা হয় সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে, ঠিক ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যে সময়টিতে হামাস হামলা চালিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে ইসরায়েলি পতাকা উত্তোলন করে তাঁদের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর সকাল ৭টা থেকে বিক্ষোভকারীরা দেশের কয়েকটি প্রধান মহাসড়ক (চৌরাস্তা) অবরোধ করেন। সেখানে তাঁরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও ব্যানার হাতে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
তেল আবিবের আয়ালোন হাইওয়ে, জেরুজালেম ও তেল আবিবের মধ্যকার রুট-১ ও উপকূলীয় রুট-২ হাইওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে, যার ফলে দেশের বেশির ভাগ স্থানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসব রাস্তা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
পরে এক পুলিশ বলেছে, প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে অন্যদের চলাচলের স্বাধীনতায় ব্যাঘাত ঘটানো হবে। অনুমতি ছাড়া রাস্তা অবরোধ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে জড়ো হয়ে সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন। জিম্মি মাতান জাঙ্গাউকারের মা এইনাভ জাঙ্গাউকার অভিযোগ করেন, ৬৯০ দিন ধরে যুদ্ধ চলার পরেও কোনো ‘স্পষ্ট লক্ষ্য’ নেই। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি জিনিসকে ভয় পান—তা হলো জনগণের চাপ। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁদের সরকার বন্দিদশা থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তি ও জিম্মিদের পরিবারকে চুপ করানোর জন্য তাঁদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তিনি জনগণকে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের শক্তি দিয়ে একটি সামগ্রিক চুক্তি ও যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব। সরকার তাঁদের (জিম্মিদের) ত্যাগ করেছে, কিন্তু জনগণ তাঁদের ফিরিয়ে আনবে।’
জিম্মি এইতান হর্নের বাবা ইৎজিক হর্ন সরকারের বিরুদ্ধে ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চুক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ভন্ডুল করার’ অভিযোগ তোলেন। গত সপ্তাহে হামাস জানিয়েছিল, তারা এমন একটি জিম্মি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, যেখানে অর্ধেক জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং অন্যদের মুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হবে। তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল কেবল তখনই চুক্তিতে সম্মত হবে, যখন সব জিম্মিকে একবারে মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি গাজা সিটি দখলের লক্ষ্যে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।
হোস্টেজ স্কয়ারে ইৎজিক হর্ন বলেন, এ সরকার তার নাগরিকদের ত্যাগ করছে... এবং জীবনের পবিত্রতা ও পারস্পরিক দায়িত্বের মৌলিক নৈতিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সামনে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও গাজা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া জিম্মিদের পরিবার ও পুরো জাতির হৃদয়ে আঘাতের মতো। জিম্মি সেনা নিম্রোদ কোহেনের বাবা ইয়েহুদা কোহেন তাঁর ছেলের অপহরণের একটি অপ্রকাশিত ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন, যা তাঁর পরিবার গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ জিম্মিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে এবং জনমত জরিপও তা দেখায়। ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ যুদ্ধের অবসান ও জিম্মিদের মুক্তি চায়।’
বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এক প্রতীকী প্রদর্শনী—একটি লম্বা টেবিলের পাশে সারি সারি হলুদ চেয়ার, যার প্রতিটিতে একজন করে জিম্মির ছবি লাগানো। টেবিলে প্লেটগুলো সাজানো থাকলেও খালি ছিল। কালো টেবিলক্লথের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল রুটি, ডাল ও বালি, যা বন্দিদশার অমানবিক পরিস্থিতি ও অনাহারের চিত্র তুলে ধরে।
আয়োজকেরা বলেন, এ বিক্ষোভের মাধ্যমে তাঁরা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে চান। তাঁদের দাবি, জনগণের সম্মিলিত চাপেই নেতানিয়াহু সরকারকে জিম্মি চুক্তিতে রাজি হতে বাধ্য করা যাবে, কারণ, দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখন আর যুদ্ধ চান না।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]