মধ্যবয়সী নারী রেশমা বেগম (ছদ্মনাম)। আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই। একটি ভাড়া বাসা নিয়ে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অসহায় এই নারীর ওপর নজর পড়ে বাড়ির মালিকের ছেলে শামীমের।
গভীর রাতে রেশমার ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন শামীম। এরপর থেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এই নারী। বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবেন বললেই বাড়ির মালিক ও লম্পট ছেলে বিবাহের আশ্বাস দেন। এভাবে কেটে যায় ৯ মাস। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বের করেন দেন অপবাদ দিয়ে। তীব্র প্রসব বেদনায় অটোরিকশায় উঠে চলে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
আজ মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় মধ্যবয়সী রেশমা বেগমের সঙ্গে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার বেতঝুড়ি গ্রামে ঝিয়ের কাজ করেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শামীম (৩৫) শ্রীপুর পৌরসভার বেতঝুড়ি গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে।
জানতে চাইলে রেশমা বলেন, ‘আমার মা-বাবা, ভাইবোন কেউ নেই। পেটের দায়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছি। অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে একটি টিনশেডের রুম ভাড়া নিয়ে থাকতাম। একদিন কারেন্ট ছিল না। দরজা খুলে শুয়ে ছিলাম। তখন রাত ১১টার দিকে ঘরে ঢুকে অভিযুক্ত আমার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। আমি চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি আমার মুখ বেঁধে ফেলেন। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে চলে যান। দুই মাস যেতেই আমার গর্ভে সন্তান চলে আসে। বিষয়টি প্রথমে তাঁর মা-বাবাকে জানাই। তাঁরা আশ্বাস দেন বিষয়টি যেন কাউকে আমি না জানাই। ছেলের সঙ্গে আমার বিবাহ দেবেন। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেলেও তাঁরা বিবাহ দিতে রাজি হননি। আমি বিচার চাইতে থানায় অভিযোগ দিই। কিন্তু পুলিশ আমার কোনো অভিযোগ আমলে নেয়নি। আমি গরিব মানুষ বলে বিচার পাইনি। আজ আমি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রচণ্ড প্রসব বেদনা উঠলে একটি অটোরিকশা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।’
পাপিয়া নামের এক নারী বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সিঁড়িতে একজন গর্ভবতী নারী পড়ে ছিলেন। এ সময় তিনি প্রসব বেদনায় কান্নাকাটি করছিলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সাহায্য করি। এরপর চিকিৎসক এসে তাঁকে চিকিৎসা দেন।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শামীমের মা বিষয়টি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু আমার ছেলে অপরাধ করেছে। এ জন্য আমি সমাধানের চেষ্টা করছি; কিন্তু সমাধান করতে পারিনি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরপরই সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভুক্তভোগী নারীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের সব ধরনের সুবিধা না থাকায় তাঁকে গাজীপুরে পাঠানো হয়েছে। আজই ওই নারীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করার পরপরই নারীকে মামলায় স্বাক্ষর করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সময়ক্ষেপণ করছেন। এ মুহূর্তে যদি ভুক্তভোগী মৌখিক অভিযোগও করেন, তবুও মামলা রুজু হবে।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]