স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে (ডিসি) উত্তরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ে একটা পরিষ্কার বার্তা আসা উচিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। চলমান বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতির সামনে উত্তরণজনিত তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ উদয় হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। এগুলো হলো, শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকা; বিশ্ববাজারে সরবরাহব্যবস্থার নতুনভাবে সামঞ্জস্য রক্ষা এবং সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য নীতির উত্থান। পাশাপাশি এই তিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদেরা সরকার ও ব্যবসায়ীদের প্রতি তিন দফা কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ রেখেছেন। তাঁদের সুপারিশ-সংবলিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন শিল্পে প্রবেশ; লজিস্টিকস, প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে বিদ্যমান প্রণোদনার সংস্কার।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন) আয়োজিত ‘ট্রাম্পের শুল্ক, বিশ্ববাণিজ্যের ভবিষ্যৎ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় তাঁরা এসব প্রসঙ্গ টেনে আনেন। রাজধানীর একটি জাতীয় দৈনিকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, জ্যোতি রহমান, জিয়া হাসান, ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সরওয়ার, দ্য ক্যাডমাস গ্রুপের পরিচালক শামারুখ মহিউদ্দিন এবং পোশাক রপ্তানিকারক ইশরাফিল খসরু এবং ব্রেইনের পরিচালক শফিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বিশ্ব আর আগের মতো উদারনীতির পথে ফিরছে না। আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত, শুধু টিকে থাকব কীভাবে নয়, বরং নেতৃত্ব দেব কীভাবে। প্রকৃত চ্যালেঞ্জ এখন মজুরি নয়, বরং লজিস্টিকস। চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার ছাড়া এফডিআই আসবে না। সহজ সুযোগ (লো-হ্যাঙ্গিং ফ্রুট) বন্দর না ঠিক করলে বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। কম খরচের শ্রমশক্তি যথেষ্ট নয়, ব্র্যান্ডগুলো যদি ১০ দিনে উচ্চমূল্যের পণ্য পাঠাতে না পারে, তারা অন্যত্র চলে যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ শুল্ক আলোচনায় কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। বাজেট প্রণয়নের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা গেলে সংস্কার দ্রুত এগোত। এলডিসি উত্তরণে সরকারের পরিষ্কার অবস্থান প্রয়োজন।’ তিনি এলডিসির চ্যালেঞ্জ উত্তরণে তিন দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেন।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, দেশের পুনরুদ্ধার শুধু দেশীয় বিনিয়োগে সম্ভব নয়। এফডিআই বাড়ানো আবশ্যক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্পর্ককে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইলেকট্রনিকস, চামড়া ও স্পোর্টসওয়্যারের মতো ছোট খাতেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং ব্যবসার খরচ কমানো অপরিহার্য।
ব্রেইনের পরিচালক শফিকুর রহমান সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক স্থায়ী নয়, যেকোনো সময় তা ৫০ শতাংশে উঠতে পারে।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]