জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় পুরোদমে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ও ‘মানবতার ব্যর্থতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জাতিসংঘের সহায়তায় কাজ করা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় ৫ লাখের বেশি মানুষ অনাহার ও মৃত্যুর মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সর্বোচ্চ ধাপ ফেজ-৫-এ পৌঁছেছে।
আইপিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজাজুড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ‘অনাহার, তীব্র অপুষ্টি ও মৃত্যু’র মুখোমুখি। তবে ইসরায়েল এই রিপোর্টকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে শতাধিক মানবিক সংস্থা, প্রত্যক্ষদর্শী এবং যুক্তরাজ্যের মতো কিছু মিত্রদেশও ইসরায়েলের এই দাবির সরাসরি বিরোধিতা করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, এই দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো সম্ভব ছিল, কিন্তু ইসরায়েলের ‘পরিকল্পিত বাধা’র কারণে ফিলিস্তিনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যায়নি। একই কথা বলেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে অন্তত ২৭২ জন মানুষ মারা গেছে, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু। আইপিসি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু আরও বেড়ে যাবে। আইপিসি পূর্বাভাস দিয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দুর্ভিক্ষ দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজার মানুষ আইপিসির ফেজ-৫-এর মুখোমুখি হবে।
ইসরায়েল সম্প্রতি আকাশপথে মানবিক সহায়তা সরবরাহ শুরু করেছে। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এ প্রক্রিয়াকে একটি ‘বিভ্রান্তিকর কৌশল’ হিসেবে সমালোচনা করেছে। এই ত্রাণ কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে; কারণ, মাটিতে পড়া প্যালেট থেকে সাধারণ মানুষ আহত ও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলেও এই অঞ্চলের জন্য প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক সরবরাহ প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদনের মধ্যেই ইসরায়েল গাজা সিটি দখল করার জন্য নতুন একটি সামরিক অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। সেই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় অন্তত ৬২ হাজার ১২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]