যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ও বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলার বুক চিরে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। নদের পশ্চিমে কচুয়া ইউনিয়ন। পূর্বে বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা ইউনিয়ন। ছাতিয়ানতলা বাজারের পাশেই এই নদীর ওপরে জরাজীর্ণ সেতুটি ছিল দুটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ গ্রামের যাতায়াতের ভরসা। ভোগান্তি কমাতে সেটি ভেঙে ২০২২ সালে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ।
তবে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন না নিয়ে কম উচ্চতায় সেতুটি নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। এরপর সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হচ্ছে বাসিন্দারা। শুধু কচুয়া আর ছাতিয়ানতলা নয়; জেলার চারটি নদীর ওপর নির্মিত ৮টি সেতুর একই দশা। কম উচ্চতায় সেতুগুলো নির্মাণ শুরু করায় আদালতে মামলা করে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। এতে থমকে গেছে কাজ। ভোগান্তি পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্মাণাধীন সেতুগুলো এলজিইডির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন না নিয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে দপ্তরটি। এলজিইডি ও প্রশাসক বলছে, সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নির্দেশ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি প্রকল্পে ২০২১ সাল থেকে সদরের ভৈরব নদের ওপর দায়তলা সেতু, একই নদের ওপর রাজারহাট হামিদপুর সেতু ও ছাতিয়ানতলা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। শার্শার বেতনা নদীর ওপর নাভারণ ঘোড়পাড়ায় দুটি ও মনিরামপুর উপজেলার শ্রী নদীর ওপর মনিরামপুর-নেহালপুর, মুক্তেস্বরী নদীর ওপরও দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আটটি সেতুর মোট ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন না নিয়ে কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ শুরু করায় বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি কর্মসূচি শুরু করে। এরপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করায় নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা সেতুগুলো নৌচলাচলের উপযোগী করে নির্মাণের আরজি জানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ শর্ত মেনে কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরও সাড়ে তিন বছর পার হলেও শুরু হয়নি কাজ। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে কাঠের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে বাসিন্দারের। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি সদরের দায়তলা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। নদীর ওপর অস্থায়ী বাসের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। নুর নাহার নামে এক নারী বলেন, ‘নদীর পূর্বদিকে ভগবতীতলা আর পশ্চিম পাশে ফতেপুর। ভগবতীতলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ এই সেতু।
সেতু না হওয়াতে কোনো যানবাহন যেতে পারে না। যানবাহনে চড়ে সেতুর সামনে নেমে বাসের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে ওপাশ থেকে গাড়িতে উঠতে হয়। কোনো রোগী অসুস্থ হলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। ১০ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হয়। আমাদের এই ভোগান্তি দূর করার দাবি জানাচ্ছি।’
সূত্র জানায়, ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ডব্লিউবিবিআইপি) আওতায় সেতুগুলোর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এখন পর্যন্ত গড় অগ্রগতি প্রায় সাড়ে ৭৮ শতাংশ। স্থানীয় নদ-নদী রক্ষা আন্দোলনের সংগঠকদের অভিযোগ, সেতুগুলোর উচ্চতা যথাযথ না হওয়ায় নৌচলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সার্ভে করে সেতুগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা তসলিমুর রহমান বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ জলপথে প্রথম শ্রেণির নৌপথের ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হবে কমপক্ষে ৬০ ফুট, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০ ফুট, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৫ ফুট এবং চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তত ১৬ ফুট। কিন্তু যশোরের নির্মাণাধীন সেতুগুলো ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার। কিন্তু তা না মেনেই নির্মাণ করা হচ্ছিল এসব সেতু। নদীকে মেরে ফেলে এসব কর্মকাণ্ড করায় আমরা জনস্বার্থে মামলা করেছি। মামলার পরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ শর্ত মেনে কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এত দিনেও কাজ শুরু হয়নি। তাদের ভুলের জন্য আজ জনগণ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।’
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সেতুগুলো নিয়ে উচ্চতা জটিলতা নিয়ে মামলা চলমান। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ডিজাইন করে কাজ করবে দপ্তরটি।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]