এত দিন কুড়িগ্রাম থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পয়েন্ট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে হতো। রংপুর হয়ে পলাশবাড়ী যেতে অতিক্রম করতে হতো প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পথ। এখনো একই পথে যাতায়াত করতে হবে। তবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারীকে সংযুক্ত করা মাওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধনের ফলে কুড়িগ্রাম-পলাশবাড়ীর দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। অর্থাৎ দূরত্ব কমছে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মাওলানা ভাসানী সেতু গতকাল বুধবার দুপুরে উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ১১ বছর পর উদ্বোধন করা হলো সেতুটি।
সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে। সেখানে সেতুর প্রবেশমুখে ফিতা কেটে উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উৎসুক মানুষের ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ঘটনাস্থলে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এলজিইডির কর্মকর্তা, সেতু নির্মাণসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ১০ আগস্ট সেতুটির নামকরণ-সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি হবে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। সেতুটি ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার অ্যাকসেস সড়ক। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু।
সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এখন উত্তরের এই দুই জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে। গড়ে উঠবে ছোট ও মাঝারি শিল্পকারখানা। পাশাপাশি ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। ভূরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। কারণ, মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ১৯৯৫ সাল থেকে শরিতুল্যাহ মাস্টার আন্দোলন চালিয়ে ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করেছিলেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় সেতুটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তাই তাঁর স্মৃতি অম্লান রাখতে ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।
এদিকে সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেকখানি কমবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হলেও পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন ভিন্ন কথা। কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবির বলেন, সেতু হওয়ায় অবশ্যই মানুষের উপকার হবে। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ঢাকার দূরত্ব ও সময় কমার যে বিষয়টি আলোচনা করা হচ্ছে, তা আসলে সঠিক নয়। তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পয়েন্ট দিয়ে ঢাকায় যেতে হয়। কুড়িগ্রাম-রংপুর-পলাশবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। নতুন এই সেতু হয়ে কুড়িগ্রাম-পলাশবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। দূরত্ব কমছে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। কিন্তু নতুন সেতু হয়ে সড়কের যে প্রশস্ততা ও অবস্থা, তাতে দূরত্ব সামান্য কমলেও সময় কমার সম্ভাবনা কম, বরং বেশি লাগতে পারে।
চিলমারী উপজেলা শহর থেকে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত প্রায় ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, কুড়িগ্রাম এলজিইডির আওতাধীন এই সংযোগ সড়কের কাজ অবহেলা করে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে সেতুর উদ্বোধন হলেও এর সুফল শিগগির পাওয়া যাবে না।
কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস বলেন, প্রায় ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মাওলানা ভাসানী সেতুর কুড়িগ্রামের চিলমারী প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ চলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সড়কের কার্পেটিং করা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]