মাদকের কারবার, কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তি আক্রোশ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরোধে খুলনা নগরীতে বাড়ছে বিভিন্ন অপরাধ। গত ১১ মাসে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) আটটি থানায় ৩০টির বেশি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ সময়ে নগরীতে ৪৭টি ধর্ষণ, ১৩৩টি নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে ১ হাজার ৬৯৩টি মামলা হয়েছে।
এদিকে নগরীতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই সুযোগে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, দাগি আসামি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বেরিয়ে আবার অপরাধজগতে ফিরে গেছে।
কেএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলেছে, খুলনার আট থানায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি হত্যা, পাঁচটি ধর্ষণসহ মোট ১২১টি মামলা হয়েছে। অক্টোবরে নগরীতে দুই খুন, সাতটি ধর্ষণসহ ১৬৫টি মামলা হয়। নভেম্বরে চার খুন, পাঁচটি ধর্ষণসহ ১৫৩টি মামলা হয়। ডিসেম্বরে ছয়টি হত্যাকাণ্ড, দুটি ধর্ষণসহ ১৪৭টি মামলা হয়। গত জানুয়ারিতে দুটি হত্যা, পাঁচটি ধর্ষণসহ মামলা হয় ১৭৮টি। ফেব্রুয়ারিতে একটি হত্যা, একটি ধর্ষণসহ ১৪৮টি মামলা হয়। মার্চে একটি হত্যা, দুটি ধর্ষণসহ ১৭০টি মামলা হয়। এপ্রিলে হয় দুটি হত্যা, ছয়টি ধর্ষণসহ ১৫৫টি মামলা। মে মাসে হয়েছে পাঁচটি হত্যা, পাঁচটি ধর্ষণসহ ১৭৫টি মামলা। জুনে তিনটি হত্যা, চারটি ধর্ষণসহ মামলা হয়েছে ১৪১টি। আর গত জুলাইয়ে দুটি হত্যা, পাঁচটি ধর্ষণসহ ১৪০টি মামলা হয়েছে।
গত ১১ মাসে নগরীতে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) খন্দকার হোসেন আহাদ বলেন, বেশির ভাগ হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটন এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে যেসব টার্গেট কিলিং হয়েছে, সেগুলো উদ্ঘাটন করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তবে আগের চেয়ে পুলিশের মনোবল অনেকটাই ফিরে এসেছে।
খন্দকার হোসেন আহাদ আরও বলেন, ছিনতাই ও চুরির ঘটনায় যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, সেসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুলিশ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করছে। তবে টার্গেট কিলিং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার, নগরীর প্রবেশমুখে চেকপোস্ট এবং গোয়েন্দা নজরদারি ব্যাপক আকারে বাড়ানো হয়েছে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার খন্দকার হোসেন আহাদ আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল। এসব ঘটনায় পুলিশের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্তমানে কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। পুলিশ এখন শক্ত অবস্থানে থেকে সাহসিকতার সঙ্গে অপরাধ মোকাবিলা করছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার থাকায় এখন প্রশাসনের ওপর দলীয় কোনো চাপও নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ভালো।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য শিগগির বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]