খাগড়াছড়ির রসুলপুর গ্রামের টিলায় দাঁড়ালে এখন চোখে পড়ে সারি সারি খেজুরগাছ। হলুদাভ বারহি জাতের খেজুর থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে, যা বছর কয়েক আগেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কল্পনায় ছিল না। অথচ এখন সেই বাগানে ভিড় করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। দামি এই ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন পাহাড়ে যে সম্ভব, তা প্রমাণ করেছেন নুর আলম নামের এক প্রবাসফেরত চাষি।
চাঁদপুরের মতলব থেকে পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন সৌদি আরব এবং বাংলাদেশে আইটি সেক্টরে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু একদিন পাহাড় ভ্রমণে বদলে যায় জীবনের পথ। প্রকৃতির প্রতি টান তাঁকে নিয়ে আসে ভিন্ন পথে। ২০১৯ সালে সাহসী উদ্যোগে বিদেশি বারহি খেজুরের চারা রোপণ করেন রসুলপুর টিলায়। আজ সেই বাগান তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
নুর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে তাঁর বাগানে রয়েছে ১০৬টি বারহি খেজুরগাছ। এর মধ্যে ৭২টিতে ফলন এসেছে। গাছের বয়স আড়াই থেকে সাড়ে পাঁচ বছর। ছোট গাছে প্রতি মৌসুমে ৭ থেকে ১০ কেজি এবং বড় গাছে ৩০-৩৫ কেজি পর্যন্ত ফল মিলছে। চলতি মৌসুমে তিনি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কেজি খেজুর তুলবেন বলে আশা করছেন। প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই ফল। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার টন খেজুর আমদানি করা হয়, যার একটি অংশ আসে কাঁচা অবস্থায়। খাগড়াছড়িতে পাওয়া এই সাফল্য দেখাচ্ছে যে উপযুক্ত আবহাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁচা খেজুর উৎপাদন সম্ভব। বিশেষত বারহি জাত, যা সারা বিশ্বে কাঁচা খাওয়ার জন্য বিখ্যাত, দেশের জন্য হতে পারে উচ্চমূল্যের নতুন কৃষিপণ্য।
চাষি নুর আলমের মতে, শুরুর খরচ অনেক বেশি হওয়ায় উদ্যোক্তারা এগোতে সাহস পান না। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি টিস্যু কালচারে চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা করে, তাহলে আমরা সহজে বাণিজ্যিক বাগান গড়ে তুলতে পারব। এতে শুধু দেশের চাহিদা মেটানো নয়, আমদানিনির্ভরতাও কমবে।’
কৃষি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, ‘বারহি খেজুর পাহাড়ি আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। গাছে প্রচুর ফলন এসেছে এবং বাজারে দামও ভালো। তিনি আশা করছেন, কয়েক বছরের মধ্যে ফলন আরও বাড়বে। তবে প্রসেসিং প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় এখনই শুকনা খেজুর উৎপাদন সম্ভব নয়।’
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন মনে করেন, এটি দেশের কৃষির জন্য নতুন দিগন্ত। তিনি বলেন, ‘খেজুর মরুভূমির ফল; অথচ খাগড়াছড়ির পাহাড়ে এর সাফল্য বাংলাদেশের জন্য আশার কথা। গবেষণার মাধ্যমে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হতে পারে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম একই মত দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, বারহি জাত দেশের আবহাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তাই উদ্যোক্তাদের উচিত, বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করা।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
খেজুর একটি উচ্চমূল্যের ফল। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় যদি উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে খেজুর চাষ শুরু করেন; তবে কয়েক বছরের মধ্যে এটি হতে পারে রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে দেশ।
নুর আলমের বার্তা
অভিজ্ঞতা থেকে নুর আলম বলেন, ‘বারহি ছাড়া অন্য কোনো জাতের খেজুর রোপণ করলে শুকানো সম্ভব হয় না। ফলে গাছে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যাঁরা নতুন বাগান করতে চান, তাঁদের শুধু বারহি জাত দিয়ে শুরু করতে হবে।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]