প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে প্রস্তাবিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া গত বুধবার প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের প্রায় ১০০টি দেশ। চুক্তিটিকে ‘দুর্বল’ ও ‘অপর্যাপ্ত’ মনে করায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
জুরিস্ট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের আন্তসরকারি আলোচনাকারী কমিটির (আইএনসি) চেয়ারম্যান লুইস ভায়াস ভালদিভিয়েসো সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চূড়ান্ত বৈঠকে জাতিসংঘের ১৮৪ সদস্যদেশের কাছে খসড়াটি উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত এই চুক্তি প্লাস্টিক দূষণ, বিশেষ করে সামুদ্রিক দূষণ বন্ধে বিশ্বের প্রথম আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন দলিল হওয়ার কথা ছিল।
চূড়ান্ত বৈঠকে বেশ কয়েকটি দেশ চুক্তি নিয়ে কড়া মন্তব্য করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘আমরা আমাদের হতাশা প্রকাশ করছি যে বর্তমান অবস্থায় এই প্রস্তাবিত খসড়া গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সামনে যে জরুরি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবিলায় এটি ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করে না।’
খসড়াটি নিয়ে দেশগুলোর সমালোচনা করার আরেকটি কারণ হলো, এতে প্লাস্টিক উৎপাদনের সর্বোচ্চ সীমা এবং পণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রস্তাব ছিল না।
চুক্তির খসড়াটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে দুটি শিবিরে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সমমনা দল; যেখানে সৌদি আরব, রাশিয়া, ইরান, মরক্কোর মতো তেল ও প্লাস্টিক উৎপাদনকারী দেশ রয়েছে। তারা প্লাস্টিক উৎপাদনে সীমা নির্ধারণে সম্মত নয়।
এই দেশগুলোর যুক্তি, প্লাস্টিক হলো টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি মৌলিক উপাদান। চুক্তিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশসম্মত ও সঠিক ব্যবস্থাপনা উৎসাহিত করা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূষণ কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
বৈঠকে প্রায় ১০০টি দেশ একমত যে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্জ্য পরিষ্কার ও পুনর্ব্যবহারের উপায় নিয়ে একটি সাধারণ সমাধানে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে তারা।
তিন বছর ধরে আলোচনার পরও ‘প্লাস্টিক দূষণ’ শব্দের আইনি সংজ্ঞা ও নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে, প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করা হবে নাকি উন্নত পণ্যের ডিজাইন বা পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে, এ নিয়ে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে জোর মতবিরোধ দেখা গেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্লাস্টিক উৎপাদন বছরে ৪০০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের কর্মকর্তা এরিন সিমন বলেন, ‘যদি আমরা এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে জেনেভা থেকে হয়তো খালি হাতে ফিরব অথবা একটি দুর্বল চুক্তি নিয়ে ফিরব। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠদের তাদের মতামত প্রকাশ করার, একটি পথ বেছে নেওয়ার এবং দূষণের পরিবর্তে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়ার সময় এসেছে।’
বৃহস্পতিবার আলোচনা আবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই প্রায় ১০০টি দেশের চুক্তি প্রত্যাখ্যান এবং চলমান বিতর্ক থেকে স্পষ্ট, দূষণ বন্ধে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানোর আগে খসড়াটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]