সড়কটি যেন পরিণত হয়েছে পুকুরে, ভোগান্তিতে গ্রামবাসী


আড়াই কিলোমিটার একটি সড়ক নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই পাবনার চাটমোহর উপজেলার ঝাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। বিশেষ করে বর্ষায় কাঁদা পানির মধ্যে যাতায়াতে করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন হাজারো মানুষ। বড় বড় গর্তে পানি জমে সড়কটি যেন পরিণত হয়েছে পুকুরে। এ নিয়ে ক্ষোভ আর হতাশার শেষ নেই এলাকাবাসীর।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝাঁকড়া গ্রাম থেকে উপজেলা ও জেলা সদরে যাবার একমাত্র সড়কটি ভেঙেচুরে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে বড় গর্তগুলো যেন পুকুরে পরিণত হয়েছে। অনেক জায়গা কাদা পানিতে একাকার। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে পাড়ি দিতে হয় এক সমুদ্র যন্ত্রণা।
ঝাঁকড়া পূর্বপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক রাসেল প্রামাণিক ও আতিকা খাতুন দম্পতি জানান, গত মাসে তাদের নবজাতক সন্তান মারা গেছে। রাসেল জানান, গত ২২ জুলাই তাদের সন্তানের জন্ম হয়েছিল। সেদিন ভাঙাচোরা সড়কে কিছুদূর হেঁটে আবার কিছুটা ভ্যানে করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে যখন উপজেলা সদর হাসপাতালে পৌঁছান, ততক্ষণে আগের সিজারের সেলাই ফেটে তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন। অপারেশন করে সন্তানের জন্মের পর দেখা দেয় জটিলতা। তারপর শিশু সন্তানকে নিয়ে পাবনা, সেখান থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৩ জুলাই মারা যায় নবজাতক।
রাসেল প্রামানিক বলেন, দুই মেয়ের পর একটি ছেলে সন্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা। যদি এই সড়কের বেহাল দশা না হতো তাহলে হয়তো আমাদের সন্তানকে হারাতে হতো না।
রাসেল প্রামানিকের স্ত্রী আতিকা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আর কি বলবো, বলার মতো ভাষা নেই। আমার ছেলেটা যে এভাবে চলে যাবে কল্পনাও করিনি। আমার সন্তানই তো নাই। এখন আমি রাস্তা দিয়ে কি করবো। আল্লাহ দুই মেয়ের পর এক ছেলে সন্তান দান করেছিল। রাস্তার বেহাল দশার কারণে আমি আমার সন্তানকে বুকে নিতে পারিনি।
ঝাঁকড়া গ্রামের সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়কের বেহাল দশায় যানবাহন চলাচলও প্রায় বন্ধ। স্থানীয় কয়েকটি মাঠের ফসল বাড়িতে নিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম ও সোলায়মান আলী বলেন, এই একটি রাস্তা দিয়ে আশপাশের সব বিলের ফসল আনা নেয়া করতে হয়। কিন্তু রাস্তার এই খারাপ অবস্থার কারণে আমাদের কষ্টের শেষ নেই। ফসলের ন্যায্য দামও পাইনা।
ভ্যানচালক আবু শাহাদত বলেন, রাস্তার এতো বাজে অবস্থা যে এ গ্রামে আমার ভ্যান ছাড়া আর কেউ ভ্যান চালায় না। সপ্তাহে সপ্তাহে গাড়ি নষ্ট হয়। গ্রামের ছেলে মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে এই রাস্তার কারণে। আমরা দ্রত এই রাস্তাটা পাকা চাই।
ঝাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল হোসেন বলেন, ‘কেউ অসুস্থ হলে তাকে যে দ্রত হাসপাতালে নেবো, তারও কোনো উপায় নাই। গ্রামে নেই তেমন যানবাহন। পায়ে হেঁটে তারপর গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে নিতে রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এভাবে একটি গ্রামের মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এত জনপ্রতিনিধি আসে যায় কিন্তু রাস্তা হয় না।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রাকিব হোসেন বলেন, ‘আড়াই কিলোমিটার সড়কের এক কিলোমিটার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির শেষ হলে পুনরায় দ্রত সময়ে কাজ শেষ করা হবে। বাকি দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’
ক্রাইম জোন ২৪