ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখনো বাড়ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতীরে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে আছে খেতের ফসল। কোমরপানি বসতঘরেও। মাচা পেতে চলছে রান্নার কাজ। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের সংকটের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
উজান থেকে হু-হু করে আসছে পানি। এতে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা তিন দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে লালমনিরহাটের তিস্তাপারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৩ মিটার; যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে।
তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু অংশ বন্যায় ডুবেছে। টানা তিন দিনের বন্যায় পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদি পশুপাখি, বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপারের মানুষ।
অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নদীপার ও চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ। উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর—এই দুই ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের অন্তত অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম, ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। পানির সঙ্গে বেড়েছে পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব, গবাদিপশুর খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে চারণভূমি ও ফসলের মাঠ। পদ্মার তীরঘেঁষা ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের চরের আবাদি জমিও প্লাবিত হয়ে বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীপারের বাসিন্দাদের মধ্যে।
কোমরপানিতে দুর্ভোগ বাসিন্দাদের
বাড়ির ভেতরে কোমরপানি। তাই মাচা পেতে রান্না করছেন মাজেরা বিবি। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের পঞ্চবটি খড়বোনায়। এটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাতেই। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে মাজেরার মতো অনেকের বাড়িতেই এখন কোমরপানি। মাজেরা বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধইরি পানির ভিতরেই আছি বাপ। কিছু তো করার নাই। তাকায় আছি যে কবে পানি নামবি। পানিত থাইকি হাত-পাও সব ঘা হয়ে গেল। খালি চুলকায়।’
নগরের বড় বনগ্রাম এলাকাতেও অনেক বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সব উন্নয়ন শুধু সাহেববাজার আর রেলগেট এলাকায়। আমরা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলেও এদিকে কারও খেয়াল নেই। এদিকে লাইট জ্বলে না। ড্রেন নেই। বৃষ্টির পানিতেই আমাদের হাবুডুবু খেতে হয়। ট্যাক্স ঠিকই দিচ্ছি, সেবা পাচ্ছি না। মেয়র-কাউন্সিলরও কেউ নেই যে কাউকে গিয়ে আমাদের দুর্ভোগের কথা বলে আসব।’
তিস্তায় বিলীন বাড়িঘর
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি পরিবার। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, সবজি খেত ও আমনের খেত।
ফসলের খেত পানির নিচে
ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব গ্রামের প্রায় ৫৪০ পরিবার। রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসলের জমিও তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল জব্বার বলেন, ‘উপজেলার ১৭০ হেক্টর জমির ধান এবং ১৫ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। আর বৃষ্টি না হলে এসব জমির পানি নেমে যাবে। এতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।’
বন্ধ পাঠদান
ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে হঠাৎ ফুলেফেঁপে উঠেছে উত্তরের প্রধান নদী তিস্তা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তা বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে। ফলে প্লাবিত হয়েছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ জনপদ।
কয়েকটি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পাঠদান। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না।
ছোটখাতা উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয় চত্বরসহ শ্রেণিকক্ষ পানির নিচে। ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে পারছে না। আমরাও নৌকায় করে আসি, কিন্তু ক্লাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]