সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রের লুট হাওয়া ‘সাদাপাথর’ উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে পাথরবাহী ট্রাক ও ক্রাশার মিল থেকে ৪৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের খবরে প্রশাসনের নজর এড়াতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ক্রাশার মিলে রাখা ‘পাথর’ বালু ও মাটি দিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল-লালবাগ, সালুটিকর ও ভোলাগঞ্জ থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কে দুই পাশের ক্রাশার মিলগুলোয় এ দৃশ্য দেখা গেছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্রাশার মিল বন্ধ দেখা গেছে। অনেক ক্রাশার মিলমালিক, বালু ও পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান।
ভোলাগঞ্জের পাথর ভাঙার মিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মিলের সামনে আমদানি করা পাথর রাখা হয়েছে। আর মিলের পেছনে থাকা লুট হওয়া পাথর বালু ও মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মিলে দ্রুত ভেঙে ফেলা হচ্ছে সাদাপাথরে লুট হওয়া পাথর।
সদর উপজেলার ধোপাগুল-লালবাগ এলাকায় মিলের পাশে থাকা মাটি তুলে পাথরের ওপর ফেলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ধোপাগুল শহীদ মিনার এলাকায় মিলেও এ রকম দৃশ্য চোখে পড়েছে।
তবে সাংবাদিক পরিচয় জেনে এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দা কিংবা মিল কর্মচারী কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
ধোপাগুল-লালবাগ এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবক (৩২) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর পাথর মিলের মালিকেরা লুট হওয়া পাথর নিয়ে ভয়ে আছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বালু বা মাটি দিয়ে ওপরে প্রলেপ দিচ্ছেন। যাতে বালু বা মাটির স্তূপ বলে মনে হয়। যেন পাথর না দেখা যায়। কেউ কেউ মাটি ও বালু একসঙ্গে পাথরের সঙ্গে মিশিয়ে রাখছেন। এতে পাথরগুলো কালো ও পুরোনো দেখা যাচ্ছে।’
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, ‘আমাদের কড়াকড়ির জন্য যারা পাথর পরিবহন করতে পারছে না, তারা এ রকম ঢেকে রাখছে।
আমাদের কাছে তথ্য আছে। আগামীকাল আমাদের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হবে। তারা এ বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করবেন। বালু বা মাটি দিয়ে লুকানো পাথর অভিযানকালে উদ্ধার করা হবে।’
ধোপাগুল-লালবাগ ও সালুটিকর এলাকা সিলেট সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, সদর উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে পাথর লুকানো হচ্ছে। এসব পাথর উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে সিলেটের অন্যান্য পাথর কোয়ারির মতো সাদাপাথরেও শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়লে দুদকসহ স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
সাদাপাথর হিসেবে পরিচিত ধলাই নদের উৎসমুখে বিপুল পাথর জমা হয়েছিল। লাগামহীন লুটপাটের কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ পর্যটনকেন্দ্র।
দিনের বেলা প্রকাশ্যেই সেসব পাথর নৌকা করে নিয়ে লুট করা শুরু হয়। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে লুটের পাথর পরিবহন করা হয়। নদীতীরের বালি খুঁড়েও লুটপাট চলে।
এই অবস্থার মধ্যে হাইকোর্টে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। শুনানি শেষে আজ বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার বেঞ্চ ভোলাগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর সাত দিনের মধ্যে উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদনটি করেন সরওয়ার আহাদ। শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]