শেবাচিমে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা: স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত, পুলিশ নীরব




বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এই হামলার ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা হাসপাতাল থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ জুলাই থেকে ‘ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালানো হয়, যার ফলে বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বুধবার বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের হামলার পর আন্দোলনকারীরা তাঁদের কর্মসূচি শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করে গণ-অনশনের ঘোষণা দেন।
এর আগে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর বরিশালে এসে আন্দোলন বন্ধের আহ্বান জানালেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বেলা ১১টায় চিকিৎসক, নার্সসহ কয়েক শ কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘নিরাপদ কর্মপরিবেশের’ দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা অনশনরত আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন এবং কয়েকজনকে মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্মচারীদের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে তিনজন অনশনকারী দ্রুত হাসপাতাল এলাকা ছেড়ে চলে যান। এরপর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, আন্দোলনকারীরা নতুন মেডিসিন ভবনে আউটসোর্সিংয়ের কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করেছেন। এই খবরে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। কর্মচারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করেন এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারী সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করা হয়।
এদিকে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যেও বিভেদ দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি বলেন, কর্মচারীরা তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। তিনি জানান, তাঁদের আন্দোলন চলবে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বুধবার গভীর রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, প্রশাসনকে সময় দিতে এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে আসার দাবিতে যাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। তাঁদের জন্যই শিক্ষার্থীরা মারধরের শিকার হয়েছেন।

কর্মচারীদের এই বিক্ষোভের কারণে শেবাচিম হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আব্দুর রহমান নামের একজন রোগীর স্বজন জানান, তাঁর শিশুসন্তানের সেবা দিতে ওয়ার্ডে কোনো নার্স বা কর্মচারী নেই। অন্য একজন স্বজন রুবিনা খানম জানান, তাঁর ছেলের নির্ধারিত অস্ত্রোপচার পিছিয়ে আগামী রোববার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীম বলেন, ‘কর্মচারীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসক-নার্সরা সবাই দায়িত্বে আছেন।’
দিনভর এই অরাজক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। ঘটনাস্থলে মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর টহল টিম উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।