কোনো দেশে বসবাসের জন্য টাকা পাওয়া যায়! সংবাদটি বেশ অবাক করাই। অনেক বিশ্বাস করেন না। অবশ্য এই সংবাদ অবিশ্বাস করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে তথ্য হলো, তেমন দেশ আছে পৃথিবীতে।
জনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন পৃথিবীর অনেক দেশ। এশিয়া কিংবা আফ্রিকা না হলেও ইউরোপের কিছু দেশ বিশেষভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন। সেখানে গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অঞ্চলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং নতুন নাগরিক আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশ বিশেষ প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে; যাতে নতুন বাসিন্দারা সেসব জায়গায় বসবাস শুরু করে।
তেমনই চারটি দেশের গল্প রইল—
আয়ারল্যান্ড: দুর্গম দ্বীপে জীবনযাপনের প্রণোদনা
আয়ারল্যান্ড সরকার ‘আওয়ার লিভিং আইল্যান্ড’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশটির প্রায় ৩০টি দুর্গম দ্বীপে নতুন বাসিন্দার খোঁজ করছে। এই দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে বেরে আইল্যান্ড, ইনিশবফিন, ক্লেয়ার আইল্যান্ড ও অ্যারানমোর। প্রোগ্রামের আওতায় পরিত্যক্ত বাড়ি সংস্কারের জন্য একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৮৪ হাজার ইউরো পর্যন্ত অর্থসহায়তা পেতে পারেন। তবে দ্বীপগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানে পৌঁছাতে নৌকা বা বিমানযাত্রা করতে হয়। বিদেশি নাগরিকেরা আবেদন করতে পারলেও তাদের আয়ারল্যান্ডে ভিসা ও বসবাসের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা। শুধু ঘর সংস্কারের জন্য নয়, আয়ারল্যান্ডের স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। এই ধরনের অংশগ্রহণকারীরা আয়ারল্যান্ডে নতুন ব্যবসা স্থাপন করলে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের সুযোগ পাবেন। ব্যবসা সফল হলে প্রথমে দুই বছরের ভিসা পাওয়া যায়, যা পরে আরও তিন বছরের জন্য নবায়নযোগ্য। পাঁচ বছর পর ব্যবসা কার্যকর থাকলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়।
সুইজারল্যান্ডে পাহাড়ি গ্রামে নতুন জীবন
সুইজারল্যান্ডের ভালাইস অঞ্চলের আলবিনেন গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যা মোকাবিলায় গ্রামটি নতুন বাসিন্দাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দিচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি শিশুর জন্য প্রায় ১২ হাজার ২০০ ডলারের প্রণোদনা। আবেদনকারীদের অবশ্যই স্থায়ী বাসস্থানের জন্য বাড়ি কিনতে হবে এবং কমপক্ষে ১০ বছর সেখানে বসবাস করতে হবে। সুইজারল্যান্ডের এই পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ার জন্য ইউরোপের নাগরিকদের প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।
ভালাইস অঞ্চলে বসবাসের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও নবায়নযোগ্য ভিসা প্যাকেজ রয়েছে সুইজারল্যান্ডের। এ ছাড়া ১০ বছর থাকার পর স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুইজারল্যান্ড রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার জন্য বিখ্যাত। একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?
১ ইউরোর বাড়ি থেকে ডিজিটাল নোমাড ভিসা ইতালিতে
ইতালির গ্রামীণ এলাকা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ‘ওয়ান ইউরো হোম’ প্রকল্প চালু আছে। এই প্রকল্পে পরিত্যক্ত বাড়ি কিনে সংস্কার করলে বিশেষ অনুদান পাওয়া যায়। তোস্কানা অঞ্চলে এই অনুদান ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ইউরো পর্যন্ত। আর সার্ডিনিয়ার ছোট শহরগুলোতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়।
ইতালি বিনিয়োগ ভিসা ও ডিজিটাল নোমাড ভিসার মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে। ইনভেস্টর ভিসার জন্য সরকারি বন্ডে ২ মিলিয়ন ইউরো, স্থানীয় স্টার্টআপে আড়াই লাখ ইউরো অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ ইউরো বিনিয়োগের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য ভিসা পাওয়া যায়।
ছোট শহরে নতুন জীবন ও প্রণোদনা স্পেনে
স্পেনও গ্রামীণ এলাকা পুনরুজ্জীবিত করতে নানান প্রণোদনা দিচ্ছে; বিশেষ করে এক্সট্রিমাদুরা অঞ্চলের ছোট শহরগুলোতে নতুন বাসিন্দারা অর্থসহায়তা হিসেবে পাবেন ৮ থেকে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত। ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণদের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার ইউরো অনুদানের ঘোষণা রয়েছে। এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হলো ছোট শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি এবং নতুন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া।
দেশগুলোর এই প্রণোদনা প্রকল্প শুধু নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করার জন্য আর্থিক সহায়তা নয়; বরং ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকা পুনরুজ্জীবিত করা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করা এবং জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। যারা নতুন জীবন, নতুন কাজ বা নতুন অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য এই দেশগুলো এখন দারুণ সুযোগ হতে পারে।
সূত্র: নোমাড ক্যাপিটালিস্ট
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]