৩ দিনের ছুটি নিয়ে ১৭ দিন অনুপস্থিত শিক্ষিকা, প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষককে মারধর


তিন দিনের ছুটি নিয়ে বিনা অনুমতিতে ১৭ দিন অনুপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিক্তা বেগম। পরে নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুপস্থিত দিনের হাজিরা দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষিকার স্বামী শ্রেণিকক্ষে ঢুকে তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক বিচার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধান শিক্ষককে মারধর করায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
মারধরের শিকার আবু মোসহাব মোহাম্মদ হায়দার খান বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) পদে রয়েছেন। আর অভিযুক্ত শিক্ষক (ওই শিক্ষিকার স্বামী) হলেন সদর উপজেলার কুমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ করিম।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল আজম অভিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল সোমবার মারধরের শিকার আবু মোসহাব মোহাম্মদ হায়দার খান এই অভিযোগ দেন।
৭ আগস্ট নিজের স্কুলে ক্লাস ফেলে রেখে মাসুদ খান সেমিয়া স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক হায়দার খানকে মারপিট করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিক্তা বেগম ২২ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। কিন্তু ছুটি শেষে তিনি আর বিদ্যালয়ে যোগ দেননি। বিনা অনুমতিতে আরও ১৪ দিন অনুপস্থিত থাকেন। পরে ৭ আগস্ট ওই শিক্ষিকার স্বামী মাসুদ করিম সেমিয়া স্কুলে যান। এ সময় প্রধান শিক্ষক হায়দার খান পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করছিলেন। মাসুদ করিম শ্রণিকক্ষে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা ছুটির আবেদন দেখিয়ে ২৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত দিনের জন্য শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের সুযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। তবে প্রধান শিক্ষক তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুদ করিম শ্রেণিকক্ষেই প্রধান শিক্ষক হায়দার খানকে গালিগালাজ ও মারধর করেন।
ঘটনা জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদ করিমের বিচার চেয়ে গতকাল সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ বিষয়ে সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) আবু মোসহাব মোহাম্মদ হায়দার খান বলেন, ‘তিন দিনের ছুটি নিয়ে আরও অতিরিক্ত ১৪ দিন অনুপস্থিত থাকেন সহকারী শিক্ষিকা রিক্তা। ৭ আগস্ট তাঁর স্বামী আরও একটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ করিম আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ওই সময় আমি ক্লাসে ছিলাম। তিনি ক্লাসে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা ছুটির আবেদন দেখিয়ে অনুপস্থিত দিনের জন্য হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য চাপ দেন। আমি তাতে রাজি হইনি। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা ছুটিতে সুপারিশ করে দিয়েছি। এতে মাসুদ করিম ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে গালাগাল করেন। একপর্যায়ে আমাকে গলাধাক্কা দেন ও মারধর করেন। এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যদিও আজ পর্যন্ত ওই শিক্ষিকা স্কুলে যোগ দেননি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কুমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ করিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে তাঁর স্ত্রী সেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিক্তা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি কাউকে মারধর করেননি। আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই ছুটির আবেদন নিয়ে যথাসময়ে যেতে পারিনি। আমার নৈমিত্তিক ছুটি অনেক পাওনা রয়েছে। চাইলে তিনি সেখান থেকে ছুটি দিতে পারতেন।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল আজম বলেন, স্কুলে গিয়ে শিক্ষককে মারধর করা খুবই অন্যায় কাজ। তবে বিষয়টি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি।
ক্রাইম জোন ২৪