নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত মনটক এলাকাটি এক সময় ছিল ছেলেদের শান্তশিষ্ট একটি গ্রাম। এখন অবশ্য তা রূপ নিয়েছে বিলাসবহুল ছুটি কাটানোর কেন্দ্রস্থলে। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিড় এবং জমজমাট রাতের জীবন এলাকাটির পুরোনো চেহারা দ্রুত বদলে দিচ্ছে।
গত ৪ আগস্ট সকালে সেই মনটকেরই একটি এক্সক্লুসিভ মেরিনায় নোঙর করা বিলাসবহুল ইয়টের ভেতর থেকে ৩৩ বছর বয়সী আয়ারল্যান্ড-প্রবাসী ফ্যাশন উদ্যোক্তা মার্থা নোলানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মৃত্যুর পেছনে কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলেনি। তবে চূড়ান্ত কারণ জানতে টক্সিকোলজি পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা চলছে। মাদক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরের একঘেয়েমি এড়াতে ধনী তরুণ-তরুণীরা সপ্তাহান্তে বা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মনটকে ভিড় জমাচ্ছেন। ইয়ট (প্রমোদতরী), রাতের জীবন আর ইনস্টাগ্রাম নির্ভর লাইফস্টাইল এলাকাটিকে নিউইয়র্কের অভিজাতদের হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জায়গায় পরিণত করেছে।
ফক্স নিউজ জানিয়েছে—বিলাসবহুল ইয়ট ক্লাব, হোটেল ও ডকের ব্যাপক সংস্কার এবং নতুন বিনিয়োগের ফলে মনটকে ধনী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। কেউ কেউ এখানে আসেন ফ্লোরিডা বা কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ থেকেও। আবার অনেকে জনপ্রিয় ইয়ট সার্কিটের অংশ হিসেবে নিউপোর্ট, মার্থাস ভিনইয়ার্ড ও ন্যানটাকেট ঘুরে আসেন। রাত নামতেই এসব ইয়টে জমে ওঠে ভাসমান পার্টি, ভোর পর্যন্ত চলে নাচ-গানের উৎসব।
মনটকে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সাবেক সিনিয়র এজেন্ট মাইকেল ব্রাউন সতর্ক করে বলেন, ‘টাকা, পার্টি আর তারুণ্য—এই তিনের মিশ্রণ মাদক বিক্রেতাদের জন্য উর্বর জায়গা। আজকাল ফেন্টানিল মিশিয়ে মাদক সরবরাহের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে।’ তাঁর মতে, ধনী তরুণেরাই মাদক বিক্রেতাদের সহজ টার্গেট। অনেক সময় তাঁরা জানেই না যে, তাঁদের কেনা মাদকে প্রাণঘাতী উপাদান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ মানুষ মাদক ওভারডোজে মারা গেছেন। যদিও ২০২২ সালের ১ লাখ ১১ হাজার মৃত্যুর তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। ব্রাউনের মতে, ‘ফেন্টানিল কার আয় কেমন, জাতি বা ধর্ম—কোনো সীমা মানে না। এটি এখন সর্বত্র।’
স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যবসায়ী মনটকের পরিবর্তনে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে সবাই একে অপরকে চিনত। গ্রীষ্মে আয়ারল্যান্ড থেকে তরুণেরা আসত মৌসুমি কাজ করতে, স্মৃতি নিয়ে ফিরে যেত। এখনকার জমায়েতগুলো বিলাসিতা আর সিনথেটিক নেশায় অভ্যস্ত।’ তাঁর মতে, আগে মনটক ছিল একটা ছোট মাছধরা গ্রাম, যেখানে টুকটাক পানীয়ের অভ্যাস সবারই ছিল, কিন্তু এখন এটি পাগলামির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
তবে মার্থা নোলানের মৃত্যুর ঘটনায়ও মনটকের দৈনন্দিন জীবন পুরোপুরি থেমে যায়নি। ঘটনার পরের দিনও ইয়ট ক্লাবের রেস্তোরাঁয় আয়োজিত ওয়াইন উৎসবে ধনী অতিথিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দিনের বেলা সোনালি বালুর সৈকতে পরিবারগুলো হাঁটছিল, শিশুরা আইসক্রিম খাচ্ছিল, ক্যাফেগুলোও ছিল জমজমাট। সূর্যের আলোয় ঝলমল করছিল ডক আর বালিয়াড়ি; তরুণেরা বিচ ভলিবল খেলছিল—যেন কোনো খারাপ খবরের কথা তাঁরা জানেই না।
কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় এক নারী চুপচাপ সেই ইয়টের দিকে এগিয়ে গেলেন, যেখানে নোলানের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর চোখে অশ্রু, স্মৃতিকাতর হয়ে বললেন, ‘সে ছিল খুব মিষ্টি ছিল, আন্তরিক। জীবনটা মাত্রই শুরু করছিল। খুব কষ্ট লাগছে।’
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]