রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের উচ্ছেদ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, আজ সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীতে কয়েক শ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় শুধু ন্যাশনাল গার্ডই নয়, ১২০ জন এফবিআই এজেন্টকেও রাতের টহলে নামানো হবে। এসব এজেন্টের বেশির ভাগই ওয়াশিংটনের এফবিআই ফিল্ড অফিস থেকে আনা হবে। তবে প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী শহর থেকেও কর্মী নেওয়া হতে পারে। এক বিবৃতিতে এফবিআই জানিয়েছে, তারা রাজধানীতে বাড়তি ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গৃহহীনদের উচ্ছেদ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রাম্প ‘হোম রুল অ্যাক্ট’-এর বিশেষ ধারার কথা উল্লেখ করেছেন। এটি মূলত জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। তবে আইন অনুযায়ী, এই নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য হয়ে থাকে।
রাজধানীর অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো শহরের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন মেমফিস, সেন্ট লুইস বা নিউ অরলিন্সের মতো উচ্চ হত্যাকাণ্ডের শহরগুলোর কথা বলেননি। তিনি ওয়াশিংটনের কিছু যুবককে ‘উচ্ছৃঙ্খল যুবকের ঝাঁক’ বলে উল্লেখ করেছেন, যা তাঁর অভিবাসীবিরোধী বক্তব্যের শব্দচয়নকেই মনে করিয়ে দেয়।
ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে শহরটিতে সহিংস অপরাধ ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে এবং চলতি বছর এই হার আরও ২৬ শতাংশ কমেছে। তবে কিশোর অপরাধ ও বন্দুক সহিংসতা এখনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ।
গত বছরের তুলনায় রাজধানীতে হত্যার হার ৩৪ শতাংশ কমলেও, ২০২৩ সালে বেড়ে যাওয়া গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ট্রাম্প জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি সরকারি বিভাগের এক সদস্য গাড়ি ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও তাঁর পরিকল্পনার পেছনে প্রভাব ফেলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প রাজধানীর একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমাদের রাজধানী শহর সহিংস গ্যাং, রক্তপিপাসু অপরাধী, বেপরোয়া যুবক, মাদকাসক্ত উন্মাদ এবং গৃহহীন মানুষের দখলে।’ তবে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ট্রাম্পের এমন দাবির সঙ্গে একমত নন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফেডারেল নিয়ন্ত্রণের আওতায় এনে পুলিশ ও নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত অপরাধ কমাতে চায়। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ট্রাম্প একই মঞ্চে সীমান্ত নীতি ও ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের বিষয়েও বক্তব্য রেখেছেন, যা রাজধানীর অপরাধ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর রাজনৈতিক তাৎপর্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]