বর্তমান যুগের বেশির ভাগ ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। আইফোনসহ স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, ল্যাপটপ—এমনকি বৈদ্যুতিক গাড়িতেও এই ব্যাটারিই ব্যবহার হয়। তবে এই প্রযুক্তি যতটা উন্নত, ততটাই জটিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমে যায়। ব্যাটারি যতবার চার্জ ও ডিসচার্জ হয়, অর্থাৎ ব্যবহার বাড়ে, তত দ্রুত এটি ক্ষয়ে যেতে থাকে।
আইফোন ৬ এবং তারপরের সব মডেলে ‘ব্যাটারি হেলথ’ নামের একটি ফিচার রয়েছে। ব্যবহারকারীরা এখন সেটিংসে গিয়ে ব্যাটারির বর্তমান স্বাস্থ্য জানতে পারেন। এই ফিচারটি আসে ‘ব্যাটারিগেট’ নামে পরিচিত এক বিতর্কের পর, যেখানে অভিযোগ ওঠে, অ্যাপল পুরোনো আইফোনগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধীর করে দেয় যেন ব্যবহারকারীরা নতুন মডেলে আপগ্রেড করেন। পরে অ্যাপল ব্যাখ্যা দেয়, তারা আসলে পুরোনো ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফোনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। এ নিয়েই যুক্ত হয় ব্যাটারি হেলথ ফিচার।
এক বছরে আইফোন ব্যাটারির কী অবস্থা হয়
অ্যাপলের মতে, আইফোন ১৪ এবং আগের মডেলগুলো ৫০০ চার্জ সাইকেল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ ব্যাটারি সক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। আর নতুন আইফোন ১৫ ও পরে মডেলগুলো ১ হাজার চার্জ সাইকেল পর্যন্ত এই সক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। তবে এর জন্য ফোনটি আদর্শ পরিস্থিতিতে থাকতে হয়। যেমন—১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি থেকে ২২ দশমিক ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যাটারি রাখা এবং অতিরিক্ত গরম হতে না দেওয়া। বাস্তবে, এই পরিস্থিতি বজায় রাখা বেশ কঠিন। ফলে অনেক সময়েই ব্যাটারির অবস্থা অ্যাপলের দাবির চেয়ে কিছুটা খারাপ হয়।
উল্লেখ্য, একটি ব্যাটারি থেকে যখন মোট ১০০ শতাংশ চার্জ খরচ হয় এবং পরে আবার চার্জ দেওয়া হয়, তখন সেটিকে একটি ‘চার্জ সাইকেল’ বলা হয়।
অর্থাৎ, আপনি একদিনে ৫০ শতাংশ ব্যাটারি খরচ করলেন, পরের দিন আরেকবার ৫০ শতাংশ খরচ করলে মোট ১০০ শতাংশ চার্জ ব্যবহার হলেই একটি চার্জ সাইকেল সম্পন্ন হয়।
একজন ব্যবহারকারীর ১৫ মাস বয়সী আইফোন ১৫-এ এখন ব্যাটারির স্বাস্থ্য ৮৮ শতাংশ, যেখানে চার্জ সাইকেল ৪০৬ হতে পারে। অ্যাপলের হিসেবে এখানে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি থাকা উচিত ছিল। অন্যদিকে, এক ব্যবহারকারীর ২০ মাস পুরোনো আইফোন ১৩-এর ব্যাটারির স্বাস্থ্য একই—৮৮ শতাংশ, যদিও তিনি তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহার করেন। এটি প্রমাণ করে, ব্যাটারির অবস্থা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যবহারের ধরন ও পরিমাণের ওপর।
আপনি সাধারণ ব্যবহারকারী হলে কী হবে
সাধারণ ব্যবহারকারীরা ৩৬৫ থেকে ৪০০ চার্জ সাইকেল সম্পন্ন হয়। এই হিসাবে, এক বছরের শেষে নতুন আইফোনগুলোর ব্যাটারি স্বাস্থ্য সাধারণত ৯০-৯৫ শতাংশ এবং পুরোনো মডেলগুলোতে ৮০-৮৫ শতাংশ থাকে।
অন্যদিকে, যারা খুব বেশি ব্যবহার করেন বা দিনে বহুবার চার্জ করেন, তাঁদের চার্জ সাইকেল ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে, ফলে ব্যাটারির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
তবে চাইলেই আপনি ব্যাটারির আয়ু কিছুটা বাড়াতে পারেন। যেমন—
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি কেন ক্ষয় হয়
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এতে একধরনের পাতলা স্তর তৈরি হয়, যাকে বলা হয় এসইআই (সলিড ইলেকট্রোলাইট ইন্টারফেস)। এটি শুরুতে ব্যাটারির অ্যানোডকে রক্ষা করলেও পরে ধীরে ধীরে পুরু হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যালেন্ডার এজিং। তাপমাত্রা বাড়লে এই এসইআই আরও দ্রুত বাড়ে, ফলে ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্সও বাড়ে—যা আবার অতিরিক্ত গরম হওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। চার্জ ও ডিসচার্জ করার সময় এসইআই আরও দ্রুত তৈরি হয়। তাই যত বেশি চার্জ সাইকেল হয়, ব্যাটারির স্বাস্থ্য তত দ্রুত কমে।
ক্রাইম জোন ২৪
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]