জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘বিপ্লবের’ আবেগ–অনুভূতির প্রতিফলন নেই: মাহমুদুর রহমান


জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘বিপ্লবের’ আবেগ-অনুভূতি প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ঘোষণাপত্রটি সাধারণ মানুষের পক্ষে পড়ে বোঝা অসম্ভব। বিপ্লবে প্রাণ দেওয়া রিকশাচালক, গ্রামের কৃষকের সন্তান, শ্রমজীবী মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘোষণাপত্রে নেই। এত লম্বা দলিলের প্রয়োজন ছিল না। আমি এর অর্ধেক পড়ে বুঝিনি।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ শনিবার সেন্টার ফর সিভিল রাইটস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, ‘আমি সম্ভবত অক্টোবর মাসে বলেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো নাম পরিবর্তন করে এটাকে বিপ্লবী সরকার করতে পারেন। তারা করেন নাই। এজন্যই আজ পর্যন্ত এই বিতর্ক চলছে–এটা বিপ্লব না অভ্যুত্থান। সবথেকে মজার কথা হলো, আমরা যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেখলাম, সেখানে বারবার অভ্যুত্থান বলা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে সর্বত্র অভ্যুত্থান, কোথাও বিপ্লব নেই। তার মানে, এই সরকারই স্বীকার করছে না যে, এটা বিপ্লব হয়েছে। এই সরকারই মনে করে, এটা বিপ্লব হয় নাই-অভ্যুত্থান হয়েছে।’
জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই সংসদের উচ্চকক্ষ নিয়ে খুব উত্তেজিত। উচ্চকক্ষের মাধ্যমে আপনি ফ্যাসিস্ট আটকাতে পারবেন? উচ্চকক্ষ তো পাশের ভারতেও আছে। এর কাজটা কী? আপার চেম্বারে কাজ হচ্ছে পুরস্কৃত করা। মানে রাজনৈতিক দলগুলো যাদের এমপি বানাতে পারে না, তাদের পুরস্কৃত করাই হচ্ছে আপার চেম্বারের কাজ।
‘দালাল বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, মিডিয়া পার্সোনালিটি—তাদের সেখানে পাঠানো হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের উদাহরণ আমাদের জানা আছে। আপার চেম্বারের মাধ্যমে কোনো মিনিংফুল সংস্কার হবে, তা আমি বিশ্বাস করি না।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের হেজিমনির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার শক্ত ভূমিকা নিয়েছে। এটা তাদের অন্যতম সফলতা। তবে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তাদের অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তরুণদের মধ্যে গত ছয় বছরে অসাধারণ পরিবর্তন হয়েছে। ভারতের হেজিমনি প্রশ্নে অনমনীয়তা এবং মুসলমানিত্বের প্রশ্নে হীনমন্যতা দূর হয়েছে। ফ্যাসিস্ট রেজিমের ১৫ বছরের ব্রেনওয়াশ ব্যর্থ হয়েছে। ব্যক্তিকে মূর্তি বানিয়ে পূজা করার প্রচেষ্টা তরুণরা ভেঙে দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবে শহীদদের মধ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কাউকে আমি পাইনি। তরুণরাই পেরেছে। আমরা পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন বানচাল করার জন্য ভারত চেষ্টা করবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও ভারতীয় এজেন্ট কাজ করছে। দিল্লিতে ষড়যন্ত্র চলছে। স্যাবোটাজ হতে পারে। যদি নির্বাচন আটকে দেওয়া যায়, তখন বৈধতার প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে আসবে।’
বিচারপতি এফ এম আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক, সেন্টার ফর সিভিল রাইটসের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশীদ প্রমুখ।