[ad_1]
সব ঠিক থাকলে মাস ছয়েক পরে জাতীয় নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পর জোরেশোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচনের কাজে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা। পুলিশও প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের দায়িত্ব পালনে। এ জন্য ভোটের মাঠে যেসব উপপরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের পোস্টিংয়ের জন্য খোঁজা হচ্ছে ঠিকুজি।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ের এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার সদস্যদের গ্রাম, থানা ও জেলার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটের প্রধানকে তালিকা তৈরি করে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবার-পরিজনের বর্তমান ঠিকানা, আত্মীয়তার সম্পর্ক-সম্পর্কিত তথ্য এবং তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসআই ও এএসআইদের এই ভেটিংটা ডিএমপির অভ্যন্তরীণ, সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
পুলিশ সূত্র বলছে, গত ৩০ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি ভেটিং ফরম জারি করেছে, যেখানে তাদের ইউনিটে কর্মরত এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে—বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান পদ ও কর্মস্থল, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নাম ও ঠিকানা, আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক ব্যক্তির পদ-পদবি, আগে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, এলাকায় কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পদে রয়েছেন কি না,৫ আগস্ট ও তার পূর্ববর্তী এবং বর্তমান কার্যক্রম, অবৈধ অর্থ গ্রহণ-সংক্রান্ত তথ্য। ডিএমপিতে কর্মরত এই পুলিশ সদস্যদের নিজ জেলা থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করে ১০ আগস্টের মধ্যে নির্ধারিত ই-মেইলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামীর সই করা এই চিঠির তথ্যগুলো জেলা পুলিশের ডিএসবিকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তথ্য যাচাই শেষে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে, তা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হবে। এরপর কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকালীন দায়িত্বে পুলিশ নিরপেক্ষ থাকবে, এটা নিশ্চিত করতে পোস্টিংয়ের আগে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংযোগ যাচাই অপরিহার্য। এ জন্য শুধু স্থায়ী ঠিকানা নয়, আত্মীয়তার নেটওয়ার্কও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে নির্বাচনের সময় নিজ এলাকায় দায়িত্বে থাকা সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার শুরু থেকে এসব যাচাই করা হচ্ছে, যাতে দায়িত্ব বণ্টনের সময় নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। তবে মাঠপর্যায়ের কিছু পুলিশ সদস্য এই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা রেঞ্জের এক এসআই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে ভেটিং করে আমাদের আজেবাজে জায়গায় বদলি করেছিল, বর্তমানে তা-ই শুরু হয়েছে। এবারও একই কায়দায় হতে পারে।’
এ ধরনের ভেটিং ফরম নিয়ে অতীতে বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দল বা তাদের সমর্থকদের পক্ষে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে এমন তালিকা প্রণয়ন করা হয়। রাজনীতিকেরা দাবি করতেন, যেসব কর্মকর্তা বিরোধী দলের সহানুভূতিশীল বলে চিহ্নিত হন, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, এটি নিয়মিত প্রস্তুতির অংশ। নির্বাচনসহ যেকোনো বড় দায়িত্বের আগে ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করা হয়, যাতে দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মপরিকল্পনাবিষয়ক এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গত বুধবার বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসিদের পদায়ন করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন যদি কাউকে বদলি ও পদায়নের প্রয়োজন মনে করে, তারা সেটা করবে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]