[ad_1]
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠকের সম্ভাবনা বহুদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে। তবে এই বৈঠকের পেছনে উভয় পক্ষেরই ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
ট্রাম্প মনে করছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাব দিয়ে সরাসরি আলোচনায় ক্রেমলিনকে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে রাজি করানো সম্ভব। ছয় মাসের স্থবিরতার পর ট্রাম্প-পুতিনের মুখোমুখি বৈঠক হয়তো ক্রেমলিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারে। কিন্তু পুতিন সম্প্রতি স্পষ্ট করেছেন, তাঁর কাছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণ এক এবং যেখানে রুশ সেনা পা রাখবে সেটাই রাশিয়া।
এই বিষয়ে এক নিবন্ধে সিএনএন মত দিয়েছে, পুতিন আসলে সময় কিনতে চাইছেন। মে মাসে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর বদলে তিনি দুটি স্বল্পস্থায়ী ও অপ্রাসঙ্গিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্তমানে রুশ সেনারা সম্মুখযুদ্ধে ভালো করছে, যা পুতিনের কৌশলগত লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হতে পারে। তাই মনে হচ্ছে, রুশ সেনাদের এমন অগ্রগতির মধ্যে আগামী কয়েক মাস তিনি আলোচনায় যেতে চান না।
যদি বৈঠক হয়, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হতে পারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন। মূলত এই সম্মেলনেই যুদ্ধ সমাপ্তির উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার উদ্দেশ্য হতে পারে ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব মস্কোর চিন্তার দিকে টেনে আনা।
এ অবস্থায় যুদ্ধের সমাপ্তি কেমন হতে পারে—এই বিষয়ে অবশ্য পাঁচটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছে সিএনএন।
পুতিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি
এটি অত্যন্ত অসম্ভাব্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়ার পরও গত মে মাসে এই একই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রাশিয়া বর্তমানে যুদ্ধে এগিয়ে রয়েছে, তাই তিনি এখনই থামতে চাইবেন না। চীন ও ভারতের ওপর মার্কিন চাপও পরিস্থিতি পাল্টাবে না। অন্তত অক্টোবর পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইবেন।
শীতের আগে একটি বাস্তববাদী সমঝোতা
সম্ভবত উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, যাতে শীতের আগে যুদ্ধ থেমে যায় এবং ফ্রন্টলাইন স্থির হয়। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করতে পারে। এর ফলে আলোচনার টেবিলে তারা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। এরপর তিনি ইউক্রেনে নির্বাচনের বিষয়টি তুলতে পারেন এবং জেলেনস্কির বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করে ইউক্রেনে একটি রুশপন্থী নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করতে পারেন।
ইউক্রেনের টিকে থাকা
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সামরিক সহায়তায় ইউক্রেন হয়তো কিছুটা ফ্রন্টলাইন ধরে রাখতে পারবে। এর ফলে রাশিয়া আলোচনায় আসতে বাধ্য হবে। ইউক্রেনের জন্য সর্বোত্তম ফল হতে পারে—ইউরোপীয় ন্যাটো বাহিনীর ‘রি-অ্যাস্যুরেন্স ফোর্স’ মোতায়েন, যা কিয়েভসহ বড় শহরগুলোকে রক্ষা করবে এবং রাশিয়াকে আরও আগ্রাসন থেকে বিরত রাখবে।
ইউক্রেন ও ন্যাটোর জন্য বিপর্যয়
যদি ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক উন্নত হয়, আর ইউক্রেনকে নিঃসঙ্গ করে দেওয়া হয়, তাহলে ইউক্রেন বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। ইউরোপ চেষ্টা করলেও মার্কিন সহায়তা ছাড়া ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে। রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলের সাফল্যকে কেন্দ্র ও দক্ষিণ ইউক্রেনে সম্প্রসারিত করতে পারে। রাজনৈতিক সংকট, সেনা সংকট ও যুদ্ধক্ষেত্রে বিপর্যয় মিলিয়ে ইউক্রেনের অস্তিত্বই ঝুঁকিতে পড়বে। ন্যাটো ঐক্য হারাবে—যা ইউরোপের জন্য হবে দুঃস্বপ্ন।
পুতিনের জন্য আফগানিস্তান ধরনের বিপর্যয়
রাশিয়া যদি দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়ে অল্প অগ্রগতি অর্জন করে এবং একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে ক্রেমলিনের ভেতরে অসন্তোষ বাড়তে পারে। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে। ইতিহাসে যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে ব্যর্থ হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি পুতিনের জন্যও তৈরি হতে পারে। একসময় তিনি দৃশ্যত শক্তিশালী হলেও হঠাৎ ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারেন। পশ্চিমা কৌশলবিদদের কাছে এটিই হয়তো সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা।
তবে এই পাঁচটি সম্ভাব্য পথের কোনোটিই নিশ্চিত নয়। এটা স্পষ্ট যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মাঠের অগ্রগতি, কূটনৈতিক উদ্যোগ, এবং বৈশ্বিক শক্তির রাজনৈতিক হিসেব-নিকাশের ওপর।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]