[ad_1]
‘আমার ছেলে তুহিন কালকে (বৃহস্পতিবার) বলেছে, “আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাব। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে।’’’ বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে এসব কথা বলছিলেন গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে তুহিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মাকে এমন বিলাপ করতে দেখা যায়। তিনি মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির ছেলে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মাঝে সবার ছোট তুহিন।
আসাদুজ্জামান তুহিনের স্ত্রীর নাম মুক্তা আক্তার। তাঁদের দুটি শিশুসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে তৌকিরের বয়স সাত এবং ছোট ছেলে ফাহিমের বয়স তিন বছর।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চান্দনায় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তাঁর গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়া আসতে শুরু করেন।
ছেলের নির্মম মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল। ক্ষণেক্ষণেই মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। আহাজারি করতে করতে হাসান জামাল বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। আমি কারও ক্ষতি চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’
তুহিনের বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজখবর নেয়। আমার ভাই কোনো দিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। কখনো খারাপ ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিত না। কেন আমার ভাইকে হত্যা করা হলো। আমার ভাইয়ের কী অপরাধ ছিল। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’ এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রত্না।
বাড়িতে উপস্থিত স্বজনেরা জানান, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৭ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করে সেখানে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করে ওষুধ কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেন। এরই মধ্যে ২০০৯ বা ১০ সালের দিকে হঠাৎ বড় ভাই জসিম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তুহিন গাজীপুরে বসবাস করতেন। তাঁর অপর ভাই সেলিমও সেখানে থাকেন। সেলিম পরিবহনশ্রমিকের কাজ করেন। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন্য ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে বসবাস করেন। তাঁদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা বসবাস করেন। তাঁরা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাঁদের দেখভাল করে আসছিলেন।
জানা গেছে, গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় গতকাল রাত ৮টার দিকে আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। তাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেছিলেন। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন। তখন আসাদুজ্জামানকে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলের একটি দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
তুহিনের সহকর্মী শামীম হোসেন বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় একজন নারী ও পুরুষ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যান। এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকেন—এই পাইছি, তোরা আয়। ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তাঁরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করেন। এ সময় তুহিন মোবাইল ফোন বের করে তাঁদের পেছনে দৌড় দেন। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে তাকান। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যান। ঠিক ওই মুহূর্তে তাঁরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান। আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।’
ঘটনার পর রাতেই নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম ও অপর একজন বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় দুটি মামলা করেন।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, উত্তর) মো. রবিউল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, একজনকে মারধরের ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]