[ad_1]
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের একটি অংশ এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দলের শীর্ষ ও মধ্যম সারির অনেক নেতা এই দেশে অবস্থান করছেন। কলকাতার এক উপশহরের বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে একটি নতুন অস্থায়ী দফতর খুলে সেখান থেকেই চলছে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম।
কলকাতা লাগোয়া একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এই অস্থায়ী কার্যালয়। একটি বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় একটি বাণিজ্যিক অফিসের আদলে এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। কক্ষের ভেতরে বা বাইরে কোথাও আওয়ামী লীগ বা এর শীর্ষ নেতাদের কোনো ছবি বা সাইনবোর্ড নেই। এমনকি নিয়মিত ফাইলপত্রও সেখানে রাখা হয় না, যেন এর রাজনৈতিক পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, এটি একটি নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ এবং বৈঠকের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রায় ৩০-৩৫ জন নেতা এই কক্ষে একসঙ্গে বসতে পারেন। ছোট বৈঠকগুলো নেতাদের বাসাবাড়িতে হলেও, বড় বৈঠক বা সমাবেশগুলো হয় রেস্তোরাঁ বা ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া করে।
গত বছর আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলির অনেক শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পেশাজীবী, সরকারি কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা কলকাতা বা এর আশেপাশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের প্রায় ৮০ জন সংসদ সদস্য এবং ১০-১২ জন সাবেক সংসদ সদস্য এখানে আছেন। তাঁদের কেউ সপরিবারে, আবার কেউ কয়েকজন মিলে একসঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এই নেতাদের অনেকেই জানান, তাঁদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ঢাকায় যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন, এখন তাঁদের গণপরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘আমরা এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছি না, তবে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি এবং গণপরিবহনে যাতায়াত করি।’
ভারতের এই অস্থায়ী কার্যালয় থেকে দলের রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া হলেও, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ মূলত ভার্চুয়াল মাধ্যমেই হয়। বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপ খোলা হয়েছে। নিয়মিত অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠানে দলের নেত্রী শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে যোগ দেন। সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের ব্যর্থতার কারণে মানুষ এখন শেখ হাসিনার আমলের কথা ভাবছে।’
ভারতে অবস্থানরত নেতাদের জীবনযাত্রা এবং দলের কার্যক্রমের আর্থিক সংস্থান কীভাবে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক নেতা জানান, দেশে ও বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাঁদের অর্থ সাহায্য করছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাংগঠনিক ভাবে যে বিপর্যয় এসেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন কাজ। যেসব নেতা-কর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তাঁরাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন।’
নেতারা জানান, তাঁদের এই সংগ্রাম কতদিন চলবে, তা বলা কঠিন। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন, দেশের বাইরে থেকে দলকে সংগঠিত করে আবার স্বদেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব। সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রবাসী সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমরা কি রাজনৈতিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারতাম?’ তিনি আরও বলেন, ‘এই রাজনৈতিক লড়াই কোনো দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]