অস্ত্রধারীদের তাড়া করার ভিডিও ধারণ করাই কি কাল হলো


গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি মার্কেটের ভেতর প্রকাশ্যে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিকের নাম আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)। তিনি ‘প্রতিদিনের কাগজ’ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাত ৮টার দিকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ঘটনার সময় তুহিন চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে তাঁকে ঘিরে ধরে এবং এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। প্রকাশ্যে দিবালোকে লোকজনের সামনে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আতঙ্কে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গাজীপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গতকালই স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, তুহিন যেখানে খুন হন, তার পাশেই দোতলায় তাঁর অফিস ছিল। বিকেলে তিনি দেখেন, কয়েকজন সন্ত্রাসী এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাড়া করছে। তুহিন সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেন। পরে তিনি ওই চায়ের দোকানে বসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা এসে তাঁকে ধাওয়া করলে তুহিন প্রাণ বাঁচাতে দোকানে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তিনজন সন্ত্রাসী দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে এনে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় আরও দুজন রামদা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ত্রধারীদের তাড়া করার ভিডিও ধারণ করার কারণেই তুহিনকে খুন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তের কিছু দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। পেছন দিক থেকে নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তাঁর সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান।