[ad_1]
রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে উচ্চাকাঙ্ক্ষার সূচনা হয়েছিল গত বছরের আগস্টে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘ঘুণে ধরা সিস্টেম’ পাল্টে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। ঘোষণা এসেছিল বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের। গঠিত হয় পরামর্শক কমিটি, আসে সুপারিশ। কিন্তু বাস্তবতা দাঁড়িয়ে আছে সেই আগের জায়গাতেই—নেই মৌলিক সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি, নেই কাঙ্ক্ষিত কর্মতৎপরতা। বরং একটিমাত্র সংস্কার উদ্যোগ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড উত্তেজনা ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা, যা বছরের শেষে ঠেলে দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতির পাহাড়ে।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার বিপরীতে এনবিআর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘাটতির জন্য যেমন কাঠামোগত জটিলতা দায়ী, তেমনি দায় আছে অদূরদর্শী প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনারও।
রাজস্ব খাতের সংস্কারে নতুন সরকার গত বছরের ৯ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। ২২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ আলাদা করার প্রস্তাব ছিল প্রতিবেদনে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১২ মে মধ্যরাতে অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়। শীর্ষ পদে কাস্টমস ও কর ক্যাডারের বাইরের নিয়োগের সুযোগ রাখার বিষয়টি এনবিআরের অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। সৃষ্টি হয় প্রশাসনিক সংকট, শুরু হয় আন্দোলন।
অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মকর্তারা শাটডাউনের মতো কর্মসূচি পালন করেন, যা আমদানি-রপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। পরিণতিতে সরকার ২৯ জুন এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরি ‘অত্যাবশ্যক সেবা’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে; যার মধ্যে ছিল বরখাস্ত, তদন্ত, অবসরে পাঠানো ও দুদকের অনুসন্ধান।
এক অতিরিক্ত কমিশনার অভিযোগ করেন, যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এটা পুরোপুরি প্রতিশোধমূলক।
সাবেক আমলা ফিরোজ মিয়া বলেন, রুটিন ওয়ার্কই তো হয়েছে; যেটা সংস্কার ছাড়া সম্ভব। আন্দোলনের ধরন সমর্থনযোগ্য না হলেও সরকার বিষয়টি কঠোরভাবে দমন না করে কৌশলে মোকাবিলা করতে পারত।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, ‘এই সরকার করবে কী? তার মিশন-ভিশনই নেই। হি ইজ পাওয়ার লাভার অ্যান্ড মানি লাভার। এদের দ্বারা কিছুই হবে না।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেটানোর চেষ্টা করলে রাজস্ব ঘাটতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে যেত না।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]