রেস্তোরাঁয় পিস্তল হাতে যুগলের খুনসুটি, ভিডিও ভাইরাল


রেস্তোরাঁয় চুপচাপ নীরবতা। খাবারের টেবিলে বসে একটি যুগল গল্প করছে। টেবিলে খিচুড়ির প্লেট। একই টেবিলে উল্টো পাশে বসে আরও একজন তাঁদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। তিনি হঠাৎ একটি পিস্তল বের করে তুলে দেন ওই যুবকের হাতে। এরপর তিনি সেটি দেন তাঁর বান্ধবীর হাতে। সেই পিস্তল হাতে নিয়ে হাসিতে ফেটে পড়েন তরুণী। মজা করে একবার তাক করেন বন্ধুর দিকে, আরও একবার টেবিলের উল্টো পাশের ব্যক্তির দিকে। এ সময় সবাই হাসতে থাকেন। চলতে থাকে তাঁদের খুনসুটি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। রেস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে খাওয়াদাওয়া ও খুনসুটির ভিডিওটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ বলছে, এটি অনেক পুরোনো ভিডিও। অন্তত দেড় মাস আগে অভিযুক্ত ওই যুবককে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। তবে সে সময় কোনো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেস্তোরাঁয় অস্ত্র নিয়ে গল্প-খুনসুটি করা ওই যুবকের নাম সাজ্জাদ হোসেন মোড়ল ওরফে আলিফ (১৮)। তিনি উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের এমসি বাজার এলাকার ইলেকট্রিকমিস্ত্রি আজাহারুল মোড়লের ছেলে। তাঁদের বাড়ি পাশের মুলাইদ গ্রামে। আলিফের নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাংয়ের দল রয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা তরুণী ও অপর ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এমসি বাজার এলাকায় আলিফ ও তাঁর সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং এমন কোনো অপরাধ নেই যা তাঁরা করেন না। ছিনতাই ও চাঁদাবাজি নিত্যদিনের কাজ তাঁদের। মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে মারামারি—সব অপরাধ করেন আলিফ ও তাঁর সঙ্গীরা। কিছুদিন আগে চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এখন তিনি জামিনে রয়েছেন কি না, তাঁদের জানা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিভিন্ন ঘটনায় অনেক কিশোর-যুবকের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। কিছুদিন আগে পাশের ধনুয়া গ্রামের আরও এক কিশোর গ্যাং লিডার তেহিম মাতবর আকাশের দিকে তাক করে গুলি ছোড়েন। সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পায়। তবে দেড় মাস হয়ে গেলেও পুলিশ তেহিম মাতবরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাঁকে ঘিরে এলাকায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আবদুল বারিক জানান, এটি পুরোনো ভিডিও। কিছুদিন আগে একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় কিশোর গ্যাং লিডার আলিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি কারাগারে আছেন। তবে তাঁর কাছ থেকে তখন (গ্রেপ্তারের সময়) কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।
আবদুল বারিক আরও জানান, ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই ছাড়া নিশ্চিত করা যাবে না, এটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র নাকি খেলনা। তবে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।