[ad_1]
হঠাৎ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানের খরচের টাকা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আলমগীর হোসেন। নিরুপায় হয়ে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে অপহরণকারীদের কবলে পড়ে কোলের সন্তান হোসাইনকে হারিয়ে ফেলেন জরিনা বেগম। আট মাস ধরে সন্তানকে খোঁজাখুঁজি করে পাগলপ্রায় দশা তাঁর। এদিকে স্বামীরও সন্ধান নেই। হঠাৎ শিশুটির সন্ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন জরিনা। মা ও এক মামাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে রওনা দেন কুমিল্লার উদ্দেশে। পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হন তিনজন। এর মধ্যে নিজে সুস্থ হয়ে উঠলেও জরিনার মাকে নিতে হয়েছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। বুকের ধন কোলে ফিরে পেলেও একের পর এক ঝড়ে তাঁর সেই আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে।
আট মাস পর গতকাল বুধবার মায়ের কোলে ফেরে চার বছরের শিশু হোসাইন। তবে তার নানি মনোয়ারা বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুশয্যায় লড়ছেন। স্বামী-সন্তানকে ফিরে পেতে একের পর ঝড় পারি দেওয়া জরিনার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে।
জানা গেছে, হোসাইনের মা জরিনা বেগম মামার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী আলমীর হোসেন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। কাজ করেন একটি দোকানে। কিন্তু হঠাৎ করেই মা ও ছেলের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেন আলমগীর। পরিবার জানতে পারে, তিনি আরও একটি বিয়ে করে সংসার পেতেছেন।
নিরুপায় হয়ে আট মাস আগে কোলের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুঁজতে চট্টগ্রামে যান জরিনা। সেখানে তাঁকে খুঁজে না পেয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে রওনা হন। সেদিন ভুল করে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়েন তিনি।
কুমিল্লার লাকসামে এসে তিন অপহরণকারী হোসাইনকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। জরিনা ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যান ঢাকায়। পরে হোসাইনের মা জরিনা বেগম বাড়ি ফিরলেও স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। পরিবারের আত্মীয়স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও হোসাইনের কোনো সন্ধান পাননি।
এদিকে কুমিল্লার লাকসাম স্টেশনে হোসাইন কান্নাকাটি শুরু করলে অপহরণকারীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের আশ্রয়ে দিয়ে আসে। সেখানে ছোট সোনামণিদের সঙ্গে কাটে হোসাইনের আট মাস।
১ আগস্ট স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় হোসাইনের সন্ধান পান তার মা। ২ আগস্ট হোসাইনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় মায়ের। পরদিন ৩ আগস্ট জরিনা, নানি মনোয়ারা ও অলিউল্লাহ নামের সম্পর্কে এক মামা মিলে হোসাইনকে নিতে দেবিদ্বারের উদ্দেশে নোয়াখালী থেকে রওনা হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা তাঁদের পিছু ছাড়েনি। পথে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পারোয়ারা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনজন। তাঁদের সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকা এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দেবিদ্বার থেকে স্থানীয় সাংবাদিকেরা গিয়ে জরিনাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই রাতে মনোয়ারার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পথে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে মাতুয়াইলের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন অচেতন থাকার পর গতকাল বুধবার সকালে তাঁর জ্ঞান ফেরে।
এদিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জরিনা সুস্থ হয়ে গতকাল ছাড়া পান। সেখান থেকে তিনি দেবিদ্বার শিশু পরিবারে এসে হোসাইনকে নিতে আবেদন করেন। দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান শিশু হোসাইনকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। এর আগে সকালে দেবিদ্বার শিশু পরিবারে সন্তানের সঙ্গে প্রথম দেখার সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এই নারী।
হোসাইনের মা জরিনা বেগম সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আজ আমার বুকের ধন খুঁজে পেয়েছি। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছি এবং আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক বরুণ চন্দ্র দে বলেন, ‘হোসাইন খুবই শান্ত প্রকৃতির একটি ছেলে। সে আমাদের শিশু পরিবারে প্রায় আট মাস ছিল। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হোসাইনকে লাকসাম পুলিশ এখানে দিয়ে যায়। সাংবাদিক আক্তার ভাইসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সন্ধান মেলে হোসাইনের পরিবারের। শিশু হোসাইনের পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বারের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয়ে থাকা শিশু হোসাইনের মা ও তার নানা এসে আবেদন করলে আমরা তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দিই।’
আবুল হাসনাত খান আরও বলেন, ‘এর আগে গত রোববার (৩ আগস্ট) হোসাইনের মা, নানিসহ তিনজন দেবিদ্বারে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁদের উদ্ধার করে যেভাবে পাশে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, এটি আমাদের সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা হোসাইনের ব্যাপারে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। তারা যদি দেবিদ্বার বা নিকটস্থ শিশু পরিবারে বাচ্চাটিকে রাখতে চান, আমরা সহযোগিতা করব।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]