[ad_1]
ভারতের আসাম রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ‘আদিবাসী’ বাসিন্দাদের জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়ার একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘোষণা দিয়েছেন, যা আসামের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দা হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ঘোষণা করেন, একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হচ্ছে, যেখানে ‘আদিবাসী মানুষ, যারা নিজেদের জীবনের জন্য হুমকি অনুভব করেন এবং সংবেদনশীল এলাকায় থাকেন, তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘এই লাইসেন্সগুলো বহু-স্তরের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে নিরাপত্তা মূল্যায়ন, যাচাইকরণ, আইন মানা, লাইসেন্স হস্তান্তর না করার শর্ত, এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করার মতো বিষয়। জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত বা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্বারা অনিরাপদ বলে বিবেচিত এলাকার বাসিন্দারা এই লাইসেন্সের জন্য যোগ্য হবেন।’
দা হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন রাজ্য মন্ত্রিসভা সীমান্তবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ‘মূল বা আদিম ভারতীয় নাগরিকদের’ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার এই পদক্ষেপকে পুলিশ স্টেশন থেকে দূরে থাকা ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকার মানুষদের নিরাপত্তা জোরদার করার একটি উপায় বলে ব্যাখ্যা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বারপেটা, ধিং, ধুবরি, জানিয়া, মরিগাঁও, নগাঁও, রুপাহি, এবং দক্ষিণ সালমারা-মানকাচরের মতো জেলাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। এই এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের শিকড় থাকা মুসলিমদের সংখ্যা বেশি।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্যে মুসলিমরা প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, অসমীয়াভাষী জনগণ ‘বাংলাদেশের দিক থেকে, এমনকি তাদের নিজেদের গ্রামেও হুমকির সম্মুখীন।’
ভারতের অন্যান্য অংশে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের আইন বেশ কঠোর। তাই শর্মার এই সিদ্ধান্ত সমালোচিত হচ্ছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি গৌরব গগৈ বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন একটি কৌশলকে উৎসাহিত করছে যা জনগণের মৌলিক চাহিদার চেয়ে অস্ত্রের ওপর বেশি জোর দেয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই নীতি রাজ্যে সংঘর্ষ ও চাঁদাবাজি বাড়াতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সমর্থকদের অস্ত্র দেওয়ার জন্য এই বন্দুকের অপব্যবহার করা হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী শর্মার এই উদ্যোগ তাঁর বিজেপি সরকারের একটি বৃহত্তর প্রচারণার অংশ। তাঁর সরকার অসমীয়াভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে ‘অবৈধ বিদেশি বা সন্দেহজনক নাগরিক’ আখ্যা দিয়ে বড় আকারের উচ্ছেদ অভিযানও অন্তর্ভুক্ত। এই অভিযানগুলো মূলত বাংলাভাষী মুসলিমদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়, যাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিক এবং আসামে তাদের দীর্ঘদিনের শিকড় রয়েছে।
২০১৯ সালে আসামই প্রথম রাজ্য হিসেবে একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে, যা থেকে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাদ পড়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। গত বছর বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে আসামে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সতর্ক করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে সীমান্তবর্তী জেলার আদিবাসী মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]