[ad_1]
‘আজকের এই দিনে আমার শ্রাবণটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে... আমি ওকে আর কোনো দিন দেখতে পাব না। ও রাস্তায় নেমেছিল এই দেশের মানুষের জন্য, ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে। সেই সাহসের শাস্তি ওকে মৃত্যুর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। আমার সন্তান ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুমের শিকার হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিচার চাই। শুধু আমার সন্তানের না, যারা যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে, প্রত্যেকের বিচার চাই আমি। এই নির্মম, নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। এই সরকারকেই করতে হবে। আমাদের যেন ব্যর্থ হতে না হয়, আমাদের সন্তানদের রক্ত যেন মাটিতে মিশে না যায়। যেন সেই রক্তের সঙ্গে কেউ বেইমানি না করে। এই দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে আমি আমার সন্তানের জন্য দোয়া চাই।’
আজ মঙ্গলবার সকালে বুকফাটা কান্নার মাঝেই কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর দোগাছি গ্রামের শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের মা বেবি নাজনীন।
এক বছর আগের এই দিনে (২০২৪ সালের ৫ আগস্ট) ঢাকার রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মাহফুজ আলম শ্রাবণ।
ঠিক এক বছর পর, সেই শোক আর প্রতিবাদের দিনটি ঘিরেই নওগাঁয় পালিত হলো গণ-অভ্যুত্থান দিবস।
দিবসের শুরুতে সকালেই শ্রাবণের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সোহেল রানা, শহীদ শ্রাবণের পরিবার ও প্রতিবাদী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে কথা হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নওগাঁর নেতা ফজলে রাব্বির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিচার চাই সব শহীদের। এই রক্তের ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না, অন্তত দোষীদের শাস্তি হোক।’
আরেক সহযোদ্ধা সাদনান সাকিব বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেল। শ্রাবণসহ যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের মুখ আজো ভেসে ওঠে চোখে। বিচার না পেয়ে আমরা হতাশ।’
কবরস্থানের পাশেই বসে ছিলেন শহীদ শ্রাবণের দাদা লাল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘এ দেশের জন্য আমার নাতি প্রাণ দিল। ছোটবেলা থেকে দেশ নিয়ে ওর একটা আলাদা টান ছিল। এখন ও নেই, শুধু ছবি আর কবর আছে। আমরা কিছু চাই না, শুধু চাই ওর রক্ত বৃথা না যাক। বিচার হোক খুনি হাসিনার।’
ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আজকের সব আয়োজনই শহীদদের স্মরণ করার জন্য। নওগাঁর সব কজন শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া করা হয়েছে। শ্রাবণেরা আমাদের নতুন দিনের প্রতিচ্ছবি। তাদের নিয়ে আমাদের চেতনাগুলো পুনর্জাগরণ হচ্ছে।
পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বলেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে। এটি আমাদের একটি বড় অর্জন। দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার প্রত্যয় নিতে হবে, তাহলেই এই শহীদদের রক্ত সার্থক হবে বলে মনে করি।’
এদিকে পর্যায়ক্রমে জেলা কৃষি বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় শ্রাবণের কবরে। একসঙ্গে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
এরপর শহরের মুক্তির মোড়ে স্থাপিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো হয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকায় শহীদ হওয়া বাকি আট তরুণের প্রতি।
দুপুরে সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা, যেখানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবার, সহযোদ্ধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিবাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
প্রদর্শিত হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র, যেখানে উঠে আসে ২০২৪ সালের ভয়াবহ সেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের দিনগুলোর ছবি, ভিডিও আর অশ্রুসিক্ত সাক্ষাৎকার। ‘জয়ের গল্প’ শোনান সহযোদ্ধারা। স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক ও গণ-আন্দোলনের কর্মীরা।
অন্যদিকে জেলার ১১টি উপজেলা প্রশাসনও দিবসটি ঘিরে আয়োজন করেছে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]