[ad_1]
ইসরায়েলি এক অবৈধ বসতি স্থাপনকারীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনি শিক্ষক ও অধিকারকর্মী আওদাহ হাতালিনের মৃতদেহ ফেরতের দাবিতে অনশন করছেন ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নারী। পশ্চিম তীরের হেবরনের দক্ষিণের গ্রাম উম আল-খাইরে এই অনশন শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এরই মধ্যে দুজন নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
৩১ বছর বয়সী আওদাহ ছিলেন ইংরেজি শিক্ষক এবং চলতি বছরের অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর পরামর্শক। গত ২৮ জুলাই ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর গুলিতে আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তাঁর মৃতদেহ নেওয়া হয় জাফার আবু কাবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে।
আজ সোমবার (৪ আগস্ট) কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, আওদাহ হাতালিনের ময়নাতদন্ত শেষ হলেও পরিবারকে তাঁর মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হয়নি। ইসরায়েলি পুলিশ শর্ত দিয়েছে, যেন মধ্যরাতে, গ্রাম থেকে দূরে, মাত্র ১৫ জন লোক নিয়ে নিঃশব্দে তাঁকে দাফন করা হয়।
নারীরা এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং আওদাহর মরদেহ ফেরতের পাশাপাশি উম আল-খাইরের যেসব বাসিন্দাকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রশাসনিক আটকাদেশে রেখেছে, তাদেরও মুক্তি দাবি করছেন। প্রশাসনিক আটকাদেশে কোনো বিচার বা অভিযোগ ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের বন্দী রাখা হয়।
আওদাহর চাচাতো বোন ইমান হাতালিন বলেন, ‘১৩ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীরা এই অনশনে অংশ নিচ্ছেন। আমি এখন অনাহারে আছি, শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছি। মৃতদেহ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এই অনশন চালিয়ে যাব। ইসলামি নিয়মে তাকে দাফন করতেই হবে।’
ইসরায়েলি গবেষণা সংস্থা আল-শাবাকার গবেষক ফাথি নিমার বলেন, ‘মৃতদেহ আটকে রাখা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এভাবে শত শত ফিলিস্তিনির মরদেহকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো হয়, যেন পরিবারগুলো প্রতিবাদ না করে। আওদাহ ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাই এটা তাদের মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়ার কৌশল।’
এদিকে, অভিযুক্ত ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইনোন লেভিকে কয়েক দিন গৃহবন্দী রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, আওদাহর বুকে গুলি চালান লেভি। তাঁকে উম আল-খাইর সংলগ্ন কারমেল বসতিতে আবারও দেখা গেছে। সেখানে তিনি সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বুলডোজিং কার্যক্রম তদারকি করছিলেন। ইতিপূর্বে তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে এসে তা বাতিল করেন। তবে তাঁর ওপর যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে।
আওদাহর স্ত্রী তিন শিশুকে নিয়ে শোকাহত। চাচাতো বোন ইমান বলেন, ‘লেভি ফিরে আসার পর আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। সে তো আবার গুলি চালাতে পারে।’ ২০২২ সালে ইসরায়েলি বুলডোজারে ইমানের বাবা সুলেমান হাতালিন নিহত হয়েছিলেন।
উম আল-খাইর এলাকায় বসতি স্থাপন এবং সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে ৭৫৭ টি, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এসব ঘটনায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এখনো ১৮৮টি মৃতদেহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে জেরুজালেম ও তেল আবিবে ফিলিস্তিনপন্থী ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক আন্দোলনকারীরা একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন। এই মিছিল থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উম আল-খাইরের এক অধিকারকর্মী বলেন, ‘নারীদের এই অনশন মরদেহ ফেরত এনে শোক প্রকাশের শেষ চেষ্টা। তারা চান, অন্তত মরদেহটিকেই সম্মানজনকভাবে বিদায় জানানো হোক।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]