[ad_1]
বিড়াল ও বিড়ালছানাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও ভিডিও আদান-প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে বিবিসি। এই নেটওয়ার্কের হাজার হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নেটওয়ার্কের এত বিপুল সংখ্যক সদস্য বিড়ালদের আহত করা ও হত্যা করার সহিংস ভিডিও এবং ছবি অনলাইনে পোস্ট করে, শেয়ার করে এবং বিক্রি করে। একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপে বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের কিছু সদস্য আরএসপিসিএ (দ্য রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল) থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিয়ে সেগুলোকে নির্যাতন করার পরামর্শ দিচ্ছে।
এই অনুসন্ধানের পর যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের রুইসলিপ পার্কে মে মাসে দুটি বিড়ালছানাকে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুই কিশোর-কিশোরী তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। আজ সোমবার তাদের সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে।
১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর, যাদের নাম আইনগত কারণে প্রকাশ করা হয়নি, তারা এই নৃশংস অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। তারা বিড়ালছানা দুটিকে কেটে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছুরি, ব্লোটর্চ এবং কাঁচি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিড়াল নির্যাতনকারীদের ওই নেটওয়ার্কের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনেই জন্ম এই নেটওয়ার্কের। পরে এটি পুরো বিশ্বে বিস্তৃত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই নেটওয়ার্কের সদস্যদের শনাক্ত করেছে বিবিসি। প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘ফেলিন গার্ডিয়ান্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রতি ১৪ ঘণ্টায় গড়ে একটি করে বিড়াল নির্যাতন কিংবা হত্যার নতুন ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এই নেটওয়ার্কে। এই বছর এ ধরনের অন্তত ২৪টি সক্রিয় গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে ফেলিন গার্ডিয়ান্স, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি। গ্রুপের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য ২ শটিরও বেশি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও ওই নেটওয়ার্কে আপলোড করেছে।
বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের কিছু অ্যাকাউন্ট বিড়াল সংগ্রহ করে সেগুলোকে কীভাবে নির্যাতন করা যায়, তা নিয়ে ওইসব গ্রুপে নিয়েমিত আলোচনা করে। কীভাবে আরএসপিসিএ থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিতে হয়, আবেদন করতে হয় তা-ও ওইসব গ্রুপে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, যুক্তরাজ্যের বিড়াল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে একজন লিখেছে যে, ‘সে তাদেরকে খুব বাজেভাবে নির্যাতন করতে চায়।’
‘ফেলিন গার্ডিয়ান্স’-এর স্বেচ্ছাসেবক লারা (নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রেখে এই নেটওয়ার্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ওদের পোস্ট করা ভিডিও-ছবি, ওদের কথপোকথন প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। এমন একটি দিনও নেই যেদিন আমার বুকটা ভার হয়ে যায় না।’ এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে শয়তানি কার্যকলাপের চরম রূপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘নির্যাতনকারীরা বিড়ালগুলোকে যে কোনো মাত্রার কষ্ট দিতে প্রস্তুত।’
বিবিসি বলছে, ওই নেটওয়ার্কে প্রকাশিত ভিডিওগুলো খুবই বীভৎস ও ভয়ংকর। পানিতে ডুবিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা, খাঁচার মধ্যে বন্দি করে খাবার না দিয়ে অনাহারে হত্যার মতো বীভৎস ভিডিও দেওয়া হয় ওই নেটওয়ার্কে। মৃতপ্রায় বিড়ালকে কীভাবে শক দিয়ে জীবিত করে আবার নির্যাতন করা হয়—এমন নির্দয় ও অমানবিক বিবরণও দিয়েছে কোন কোনো নির্যাতনকারী।
নতুন সদস্যদের নির্যাতন করে ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে নেটওয়ার্ক আরও বড় হয়। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব নির্যাতনকারীদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিবিসি বলছে, অনুসন্ধানে তারা একটি পোস্ট দেখেছে যাতে লেখা ছিল, ‘আমার বয়স ১০ এবং আমি বিড়াল নির্যাতন করতে ভালোবাসি।’
বিড়াল নির্যাতনের একটি গ্রুপে ‘১০০ বিড়াল হত্যা’ নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল!
ধারণা করা হয় ২০২৩ সালে চীন থেকে এই নেটওয়ার্কের সৃষ্টি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চীনের ওয়াং চাওই নামে এক চীনা ব্যক্তি বিড়াল নির্যাতনের দুটি গ্রাফিক ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিও দুটি চীনা ও পশ্চিমা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে, এর জেরে ওয়াংকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিন বন্দি থাকতে হয় তাকে। পরে একটি অনুতাপপত্র লিখে মুক্ত হন তিনি।
মূলত ওয়াংয়ের ওই ভিডিওগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই অনেকে নতুন করে একই ধরনের নির্যাতনের কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করে। একাধিক এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে গড়ে ওঠে চক্রভিত্তিক গ্রুপ। একটি ওয়েবসাইট নিজেদের ‘ক্যাট লাভার্স কমিউনিটি’ বলে দাবি করলেও সেখানে প্রবেশাধিকার পেতে হলে ব্যবহারকারীদের বিড়াল নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হয়।
এই নেটওয়ার্কে ‘লিটল উইনি’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রোফাইল ছবিতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে, যেখানে তাঁকে কার্টুন চরিত্র উইনি দ্য পুহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এমন অ্যাকাউন্ট একাধিক চক্রে প্রশাসক হিসেবেও যুক্ত।
প্রাণী অধিকার সংগঠন ‘ফেলিন গার্ডিয়ান্স’-এর পরিচালক লারা ছদ্মবেশে এই চক্রে প্রবেশ করেন। তিনি জানান, ‘লিটল উইনি’ নামের একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তিনি গ্রুপে ঢোকার সুযোগ পান। এরপর সেখানে তিনি একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একপ্রকার অনুভূতিহীন করে রেখেছিলাম, নইলে এই ভিডিওগুলো দেখা সম্ভব ছিল না।’
কয়েক সপ্তাহ পর ওই কর্মী অভিযুক্তের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি জাপানের টোকিওতে বসবাসরত ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ওই ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ভিডিও তৈরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
সংগঠনটির পরিচালক লারা বলেন, ‘এই ধরনের চক্র যদি এখনই রোধ না করা হয়, তাহলে এটি আরও বিস্তৃত হবে এবং ভয়ংকর রূপ নেবে।’ তিনি জানান, লন্ডনে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে বেইজিংয়ের প্রতি কড়া আইন প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। লারা বলেন, ‘চীনে প্রাণী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো আইন নেই। শাস্তি ভয় না থাকায় এমন জঘন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারছে অপরাধীরা। একবার এসব ভিডিও অনলাইনে এলে তা শুধু চীনা সীমায় থাকে না, তখন এটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ভিডিওগুলো শিশুদের কাছেও সহজেই পৌঁছাচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।’
ব্রিটিশ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা আরএসপিসিএর বিশেষ অভিযান ইউনিটের প্রধান ইয়ান ব্রিগস বলেন, ‘প্রাণীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে অধিকাংশ মানুষ প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল, সেখানে এ ধরনের সহিংসতা গভীর উদ্বেগের বিষয়।’
ব্রিটিশ সংসদের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ক্যাটস-এর চেয়ারপারসন এমপি জোহানা ব্যাক্সটার বলেন, ‘এই চক্রগুলো তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা তৈরি করছে। প্রাণী নির্যাতন ভবিষ্যতের মানবিক সহিংসতারই পূর্বাভাস।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]