[ad_1]
যখন তাঁর স্বামী শহীদ হলেন, তখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া খাতুন। বিয়ের মাত্র ছয় মাস পর স্বামীকে হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিনি। স্বামীর জন্য শোক পালন করবেন, সে সুযোগও দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী। সারাক্ষণ বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা, হাজারো হুমকি-ধমকি আর নানা প্রশ্ন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেলেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া দিশেহারা হয়ে গেলেন স্বামীর শেষ স্মৃতি গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় বাবা শাহাব উদ্দিন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক এসে তাঁকে নিয়ে গেলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পুনাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে। এমন কঠিন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াননি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পাননি কোনো সান্ত্বনাও।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে গেলে নতুন স্বাধীন দেশে স্বস্তির নিশ্বাস নেন সাদিয়া খাতুন। কিন্তু তখন বুঝতে পারেননি, স্বামীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে বঞ্চিত হবেন তিনি ও তাঁদের সন্তান। স্বামী শহীদ হওয়ার ছয় মাস পর ১৯ জানুয়ারি তিনি একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। নাম রাখেন সাবরিনা বিনতে সিদ্দিকী। সরকার শহীদ পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিলেও আজও একটি টাকাও পাননি তিনি। শ্বশুর আব্দুল হালিম সব টাকা উত্তোলন করে নিজের নামে ব্যাংকে জমা করেছেন। অপর দিকে সরকার ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দিলেও তাঁর নমিনি কে হবে, তা নিয়ে চলছে জটিলতা। বাবা ও স্ত্রী দুজনই নমিনি হওয়ার দাবি করছেন।
কোলের শিশুকে নিয়ে ইউএনও কার্যালয়সহ নানাজনের কাছে ঘোরাঘুরি করেছেন সাদিয়া, কেউ পাশে দাঁড়াননি তাঁর। শিশুসন্তানের লালন-পালনের ব্যয় কোথা থেকে আসবে, কেউ খোঁজ নেননি। স্বামীর শোক আর সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায়, এখন পাগল প্রায় তিনি। তবে এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ থেকে একজন সমন্বয়কের মাধ্যমে কিছু অনুদান পেয়েছেন সাদিয়া।
বর্তমানে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই আছেন সাদিয়া খাতুন। ছোট্ট শিশুটি বাবার স্নেহ, আদর-ভালোবাসা কোনো দিন পাবে না, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন তিনি। লালন-পালন আর ভবিষ্যতে লেখাপড়ার খরচ আসবে কোথায় থেকে, এমন হাজারো চিন্তায় দিশেহারা তিনি। সরকার থেকে প্রাপ্ত পাঁচ লাখ টাকা তাঁর শ্বশুর উত্তোলন করে নিজের নামে ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন, অথচ শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর শিশুসন্তানের লালন-পালনের খরচ কোথা থেকে আসবে, সে খবর কখনো নেন না তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আব্দুল হালিমকে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি বন্ধ পায় যায়।
গৌরীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি বাহালুল মুন্সী বলেন, ‘শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের সন্তানের লালন-পালন ও একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। নূরে আলম সিদ্দিকীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কিছু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, এগুলো সমাধানের জন্য চেষ্টাও হয়েছে একাধিকবার।’
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আমীন পাপ্পা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুসন্তানকে নিয়ে শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী কষ্ট করছেন, বিষয়টি অমানবিক। দুই পরিবারের বিরোধ সমাধান করতে একাধিকবার উভয় পরিবারকে নিয়ে বসা হয়েছে, কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। আমরা আন্তরিকভাবেই সে চেষ্টা করছি। অনুদানের পাঁচ লাখ টাকা নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আব্দুল হালিমের নামে সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জমা আছে। স্ত্রী-সন্তানের প্রাপ্য হিস্যা ডিসি স্যারের (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সারা দেশে ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এদিন সকাল থেকেই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা।
একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে তাঁরা ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করেন। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা-পুলিশের একটি দল গিয়ে প্রথমে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে ও পরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রাম গ্রামের নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব, ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের বিপ্লব হাসান ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের জুবায়ের শহীদ হয়েছেন। এদিন আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]