[ad_1]
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারতের ভিসা বন্ধের কারণে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত এলাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপির বেশি। একসময় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য জমজমাট এই কেন্দ্রটি এখন পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। এখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য ব্যবসার ওপর এই পর্যটক খরার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পেয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এক বছর আগেও কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ ছিল শহরের খাদ্য, আতিথেয়তা এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের একটি ছোট কিন্তু প্রাণবন্ত অংশ। তবে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, এই এলাকার বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। এক বছর পরেও এই অস্থিরতার রেশ রয়ে গেছে, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি রুপির বেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে।
নিউ মার্কেট সংলগ্ন এবং ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মারকুইস স্ট্রিটের পাশে অবস্থিত এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে পছন্দের জায়গা। এটি সাশ্রয়ী মূল্যের হোটেল, ‘ওপার বাংলার’ খাবার পরিবেশনকারী রেস্তোরাঁ, প্রধান রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালের কাছাকাছি অবস্থান এবং চিকিৎসা সুবিধার সহজলভ্যতার জন্য পরিচিত। মাত্র এক বছর আগেও এই এলাকাটি পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকত। কিন্তু এখন, একসময়ের ব্যস্ত এই এলাকার গলিগুলো নীরব হয়ে গেছে।
বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতির অনুমান অনুযায়ী, ‘মিনি বাংলাদেশ’ গত এক বছরে ১ হাজার কোটি রুপির বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান বলেন, ‘হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা ব্যবসা, ট্র্যাভেল এজেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন খাত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হয়। যদি আমরা নিউ মার্কেট এবং বড়বাজারের ক্ষতি বিবেচনা করি, তাহলে এটি ৫ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে।’
এলাকার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা স্থানীয় ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে। মারকুইস স্ট্রিটের একটি ট্র্যাভেল কোম্পানির ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস বলেন, ‘এক বছর আগেও একই সময়ে একাধিক বাস ভর্তি পর্যটক আসতেন, যার ফলে পার্কিং করা কঠিন হয়ে যেত। আজ, কোনো কোনো দিন একজন পর্যটকও আসে না।’
বাংলাদেশি টাকা লেনদেনকারী মুদ্রা বিনিময় ব্যবসাগুলোও এখন প্রায় অচল। কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন, মারকুইস স্ট্রিটের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, ‘আমরা টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি। আমরা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।’
ব্যবসায়ীদের মতে, সংকটের পর থেকে এই এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি বড় রেস্তোরাঁও এখন সীমিত বাজেটে চলছে। রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, ‘ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের বেশির ভাগের জন্যই এটি অলাভজনক হয়ে পড়ছে। আমরা কোনোমতে টিকে আছি। পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছি।
বাংলাদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হওয়া আসলে এই এলাকার ব্যবসার জন্য দ্বিগুণ আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কোভিড মহামারির সময়েও ব্যবসায়ীরা একবার বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। মারকুইস স্ট্রিটের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর মালিকের ছোট ভাই বলেন, ‘মহামারির পর ব্যবসার উন্নতির আশায় আমরা অনেকেই অনেক বিনিয়োগ করেছিলাম। এমনকি ব্যবসা সংস্কার ও পরিবর্তনের জন্য ঋণও নিয়েছিলাম। এই অস্থিরতার আগে ব্যবসা ভালো চলছিল। এই মানসিক চাপের কারণে আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের মাসিক ১ দশমিক ৫ লাখ রুপি ইএমআই দিতে হয়, অথচ আয় প্রায় নেই বললেই চলে।’
বড় ব্যবসা ছাড়াও, পর্যটন নির্ভর অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি—যেমন ঘরে তৈরি খাবার সরবরাহকারী, হোমস্টে অপারেটর, ট্যুর গাইড— এসব ব্যবসাও ভেঙে পড়েছে। শত শত স্থানীয় বাসিন্দা যারা হোটেল কর্মী, বাবুর্চি, ড্রাইভার এবং খুচরা দোকানে কাজ করতেন, তাঁরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল বলেন, ‘মহামারির পর চাহিদা বাড়লে আমি দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। ব্যবসা ভালোই চলছিল এবং প্রায়শই আমাকে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে হতো। এখন মাসে মাত্র পাঁচ-ছয়টি বুকিং পাই—এবং তাও স্থানীয়দের কাছ থেকে, যারা বেশি দাম দিতে চায় না। আবার আমাকে ইএমআই (কিস্তি) দিতে হয়।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]